728×90 ads

বিংশ শতকে ক্ষমতার কেন্দ্র কীভাবে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় সরে যায়?

ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পোর্তুগাল, জার্মানি প্রভৃতি দেশের নেতৃত্বে ইউরোপ ছিল বিশ্বরাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বিংশ শতকের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগদানে আগ্রহ দেখায়। এর ফলে বিংশ শতকের শুরতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইউরোপ থেকে ক্রমে আমেরিকায় সরে যায়।

ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইউরোপ থেকে আমেরিকায় স্থানান্তর বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইউরোপ থেকে ক্রমে আমেরিকায় সরে যাওয়ার প্রেক্ষপট ছিল-

[1] আমেরিকার আত্মপ্রকাশ: ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইঙ্গ-

ফরাসি শক্তির মতো জার্মানি, ইটালি, রাশিয়া প্রভৃতি দেশও বহির্বিশ্বে সম্প্রসারণে নজর দেয়। ফলে ইউরোপীয় রাজনীতি ক্রমে বিশ্বরাজনীতির রূপ ধারণ করে। বিংশ শতকের শুরুতে আমেরিকা তার বিপুল অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি নিয়ে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। 
[ 2] অর্থনৈতিক শক্তিবৃদ্ধি: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে

আমেরিকায় দ্রুত শিল্পায়ন ঘটে। যুদ্ধের প্রথম তিন বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মিত্রদেশগুলিকে ঋণবাবদ ২.৩ বিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য করে। আমেরিকার এই আর্থিক শক্তির ফলে বিশ্ব-অর্থনীতির মূলকেন্দ্র ইউরোপ থেকে আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয়।

[3] পরিসংখ্যান: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্ব-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্রিটেনের একাধিপত্য ধ্বংস হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়। এই সময় আমেরিকার জনসংখ্যার আনুপাতে মার্কিন উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি নীচের সারণি থেকে বোঝা যেতে পারে। 

[4] যুদ্ধে যোগদান: ত্রিশক্তি মৈত্রীর ("Triple Entente') সদস্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮ খ্রি.) প্রথমদিকে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। গণতন্ত্রের বিপর্যয়ে আতঙ্কিত হয়ে 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার চিরাচরিত নিষ্ক্রিয়তা ও নিরপেক্ষতা নীতি ত্যাগ করে এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এপ্রিল ত্রিশক্তি মৈত্রীর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ফলে ত্রিশক্তি মৈত্রীর জয় সুনিশ্চিত হয়।

[5] উড্রো উইলসনের নেতৃত্বে: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন

রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন তাঁর 'চোদ্দো দফা শর্ত' ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি, বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি আদর্শের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দেন। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেয়।

[6] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন অর্থনীতি সংকটের সম্মুখীন হলে সমগ্র বিশ্ব-অর্থনীতিও মহামন্দার শিকার হয়। এই ঘটনা থেকে বিশ্বে মার্কিন অর্থনীতির প্রভাবশক্তির মাত্রা উপলব্ধি করা যায়। এই সময় আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানের অগ্রগতি রোধ করে।

মূল্যায়ন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বদানের ফলে যুদ্ধে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের পরাজয় বিশ্ব-রাজনীতিতে ইউরোপীয় শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ করে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউরোপের পুনর্গঠনেও আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এভাবে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপের পরিবর্তে বিশ্বরাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

Post a Comment

0 Comments