পোস্টগুলি

ভূগোল লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জল সম্পদ সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকার ব্যবস্থাপনা

জল সম্পদ সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকার ব্যবস্থাপনা (Conservation of Water Resources and Watershed Management) পৃথিবীর সাগর ও মহাসাগরগুলিতে জল সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় 97% ও স্বাদু জলের পরিমাণ মাত্র 3%। এই স্বাদু জলের আবার 69% হিমবাহ ও বরফের চাদরে সঞ্চিত আছে এবং প্রায় 30% ভৌমজল হিসাবে সঞ্চিত হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় 0.9% জলের 87% হ্রদে, 11% জলাভূমিতে এবং 2% নদনদীতে সঞ্চিত আছে। পৃথিবীতে জল হল এমন একটি উপাদান, যা তরল, কঠিন ও বাষ্পীয়-এই তিন অবস্থাতেই থাকতে পারে। পর্যাপ্ত মাত্রায় জলের অভাবে জীবজগতের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায় এবং বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জলসম্পদের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে সমস্যা লক্ষ করাও যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জল সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকার ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জল সম্পদ সংরক্ষণ (Conservation of Water Resources) • সংজ্ঞা: যে পদ্ধতিতে জলের অপচয় রোধ, নিয়ন্ত্রিত ও কাম্য ব্যবহার, পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তিসংগত ও সুপরিকল্পিতভাবে জলকে ব্যবহার করা যায়, তাকে জল সংরক্ষণ বলে।  সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ: নিম্নলিখিত বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে জল

বন্ধ বা নল পদ্ধতি / ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি

বন্ধ বা নল পদ্ধতি / ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি (Closed Conduit Method / Small Scale Irrigation System) • সংজ্ঞা (Definition): কৃত্রিম পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় যখন স্বল্প পরিমাণ জলের সাহায্যে বেশি পরিমাণ কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়, তখন তাকে ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে পাইপ বা নল ব্যবহার করা হয়, যার একটি দিক জলের উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে অন্য দিকটি কৃষিজমিতে উন্মুক্ত থাকে এবং এই জলসেচ পদ্ধতিতে জল কৃষিজমির বাইরে নির্গত হতে না পারায়, একে বন্ধ বা নল পদ্ধতি বলা হয়।  বিশেষ বৈশিষ্ট্য: (i) স্বল্প পরিমাণ জল ব্যবহার করা হয়। (ii) বিস্তীর্ণ জমিতে এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা সম্ভব নয়। (iii) জলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা হয়। (iv) শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক অঞ্চলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। (v) এই পদ্ধতির সাহায্যে জলের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। তাৎপর্য: (i) সব প্রকৃতির ভূমিভাগে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। (ii) যন্ত্রপাতির স্থাপন ও ব্যবহার যথেষ্ট সহজসাধ্য। (iii) জল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। (iv) ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত মান বজায় থাকে। (v) সারের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। (vi) মৃত্তিকা

মুক্ত বা নালা পদ্ধতি/বৃহৎ মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি

মুক্ত বা নালা পদ্ধতি/বৃহৎ মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি (Open Conduit Method/Large Scale Irrigation System) • সংজ্ঞা: যখন এক ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য কোনো বিশাল আয়তনের জমিতে আল বা নালার মাধ্যমে কোনো জলাশয় বা কোনো নদীর জল সরবরাহ করা হয়, তখন তাকে মুক্ত বা নালা পদ্ধতি বা বৃহৎ মাত্রার সেচ পদ্ধতি বলা হয়।  শ্রেণিবিভাগ: বৃহৎ মাত্রার সেচ ব্যবস্থা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত-1 . পৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা (Surface Irriga- tion Stystem) ও 2 .উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা (Subsurface Irrigation System) | • পৃষ্ঠীয় ও উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থার ধারণা: বিভিন্ন জলাশয় থেকে পাম্প দিয়ে জল তুলে, সেচ খালের জল জমির উপর দিয়ে চালনা করে অথবা নলকূপ বা কূপের সাহায্যে (ভৌমজল কৃষিজমির উপর প্রবাহিত করাকে পৃষ্ঠীয় ও উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা বলা হয়। মুক্ত বা নালা পদ্ধতি/বৃহৎ মাত্রার জলসেচ পদ্ধতির বিভিন্ন কৌশল: খাল জলসেচ পদ্ধতি (Canal Irrigation Method):  সংজ্ঞা: স্বল্প ভূমিঢাল সম্পন্ন কৃষি জমির কাছে বিভিন্ন জলাশয়, যেমন-নদী, হ্রদ প্রভৃতি থাকলে সেখানকার জল খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হয়। এই জলসেচ পদ্ধতিকে খাল জলসেচ পদ্ধতি বলা হয়। • শ্র

জল সম্পদ - জলসেচ ও জল সংরক্ষণ

বিশ্ব সম্পদের ব্যবহার: জল সম্পদ- জলসেচ ও জল সংরক্ষণ (Utilization of World Resources: Water Resource-Irrigation and Water Preservation) ভূমিকা: পর্যাপ্ত জল কৃষিব্যবস্থার এক অন্যতম উপাদান। অপরিমিত বৃষ্টিপাত ঘটলে পর্যাপ্ত জলের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। তাই অনুকূল ভূমিরূপ, উন্নতা ও মৃত্তিকার উপস্থিতি থাকলে পর্যাপ্ত জলের জোগান সুনিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কৃত্রিম পদ্ধতিতে জলের জোগান দেওয়া হয়, যা জলসেচ ব্যবস্থা নামে পরিচিত। পৃথিবীতে বহু প্রাচীন সভ্যতায় জলসেচ পদ্ধতি প্রয়োগের নিদর্শন পাওয়া যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে জলসেচ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও আধুনিকীকরণ ঘটেছে। সম্পদ রূপে জল (Water as a Resource) জীবের জীবনধারণের জন্য জল অত্যন্ত অপরিহার্য একটি উপাদান। বিভিন্ন খনিজের সমন্বয়ে সৃষ্ট জল একটি সাধারণ তরল পদার্থ। কৃষি, শিল্প, পরিবহণ, মানুষের দৈনন্দিন কার্যাবলি বিশেষত পানীয় হিসেবে জলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলের এই উপযোগিতা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে জলকে সম্পদ রূপে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ জলের সংকট লক্ষ করা যাচ্ছে এবং 202

ভারতের জলসেচ

ভারতের জলসেচ (Irrigation of India) ভারতের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর এবং ভারতের কৃষিজমির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। জলসেচ ব্যবস্থা ভারতে মৌসুমি বৃষ্টির ওপর কৃষিকাজের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে এবং শস্যের উৎপাদন, খাদ্যসুরক্ষা ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Irrigation in India) ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল- (i) ভারতীয় কৃষি অনেকাংশে বৃষ্টিপাতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ভারতে প্রায় 75% বৃষ্টিপাতই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হয়। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন অনিশ্চিত হওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে জলের প্রাপ্যতার বিষয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। (ii) সারাবছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের জন্য জলসেচের প্রয়োজন। (iii) বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ক্ষেত্রে যথেন্ট তারতম্য লক্ষ করা যায়। (iv) সবুজ বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় জলসেচের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ উচ্চফলনশীল বীজ থেকে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন হয়। (v) ফসল উৎপা

অধিক জলসেচের বিপদ

অধিক জলসেচের বিপদ (Dangers of Overwatering in Irrigation) প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে জলসেচের ফলে শস্য উৎপাদন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি মৃত্তিকার স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। অধিক জলসেচজনিত বিপদগুলিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ-এই দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রত্যক্ষ বিপদ:  (i) কৃষিজমির গুণগত মানের অবনমন : জলসেচের সুবিধা থাকায় সারাবছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পায়। (ii)  অক্সিজেনের ঘাটতি : অতিরিক্ত জলসেচের ফলে ভূমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং জলমগ্ন মৃত্তিকায় অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় উদ্ভিদের মূল পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। (iii)  উদ্ভিদের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা : জলমগ্ন ভূমিভাগে শক্তির পরিবহণ কম হওয়ায় উদ্ভিদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমস্যা লক্ষ করা যায়। (iv) উদ্ভিদের শিকড়ের রোগ : জলমগ্ন মৃত্তিকায় জীবাণুর ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্ভিদের শিকড়ে পচন রোগ জনিত সমস্যা দেখা যায়। (v) উদ্ভিদের অন্যান্য রোগ : জলমগ্ন ভূমিভাগে উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। (vi)  উপকারী প্রাণীর মৃত্যু : অতিরিক্ত মাত্রায় জলসেচের ফলে মাটির বিভিন্ন উপকারী প্রাণী, যেমন-ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো প্রভৃতির মৃত্যু হয়। (vii)  মৃত

জলসেচে জলের ব্যবহার ও অপব্যবহার

জলসেচে জলের ব্যবহার ও অপব্যবহার (Use and Misuse of Water in Irrigation) জলসেচে জলের ব্যবহার (Use of Water in Irrigation) (i) চারাগাছের বৃদ্ধি: সুনির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে চারাগাছের বৃদ্ধি ও বিকাশ সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য পরিমিত পরিমাণ জল প্রয়োজন।  (ii) অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়া: কৃষিজমিতে বীজ বপন করার পরে তা থেকে অঙ্কুরোদ্গমের জন্য যথাযথ মাত্রায় জল দেওয়ার প্রয়োজন হয়।  (iii) ফসল উৎপাদনের জন্য জলের জোগান: ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন। কৃষিক্ষেত্রে জলের জোগান অব্যাহত রাখার জন্য মিশরে নীলনদের ওপর এবং ভারতে দামোদর পরিকল্পনা, ভাকরা-নাঙ্গাল প্রকল্প প্রভৃতি বহুমুখী নদী-উপত্যকা পরিকল্পনা গড়ে তোলা হয়েছে।  (iv) সার ব্যবহার: সেচের জলের সাহায্যে কৃষিজমিতে সার ব্যবহার করা যথেষ্ট সহজসাধ্য হয়। লবণাক্ততার প্রভাব হ্রাস: সেচের জলের সাহায্যে মাটির উপরিভাগে সঞ্চিত লবণের অপসারণ ঘটে।  (Vi) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: জলসেচের জন্য তৈরি বাঁধের পিছনে সঞ্চিত জলে টারবাইন ঘুরিয়ে যথেষ্ট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।  (Vii) পানীয় জলের জোগান: সেচের জন্য ব্যবহৃত জলকে বিশুদ্ধ করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।  (Viii) প

জল সম্পদ সংরক্ষণ

জল সম্পদ সংরক্ষণ (Conservation of Water Resources) সংজ্ঞা : যে পদ্ধতিতে জলের অপচয় রোধ, নিয়ন্ত্রিত ও কাম্য ব্যবহার, পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তিসংগত ও সুপরিকল্পিতভাবে জলকে ব্যবহার করা যায়, তাকে জল সংরক্ষণ বলে।  জল সম্পদ সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ:  নিম্নলিখিত বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে জল সম্পদ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে জলের চাহিদা হ্রাস: দৈনন্দিন জীবনে মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলির জন্য প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা কমানো প্রয়োজন। বাঁধ ও জলাধার গঠন: নদীতে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করে জল সঞ্চয় করা যেতে পারে এবং ওই জলকে বহুমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে জল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। • জলসেচের কাম্য ব্যবহার: নিয়ন্ত্রিত উপায়ে বিশেষত বিন্দু ও ফোয়ারা পদ্ধতির সাহায্যে জলসেচ করলে প্রায় 32% জলের অতিব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়। জলনিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিবিধান: নর্দমার জল যাতে কোনোভাবে জলাশয়ের জলকে দূষিত করতে না পারে, তার জন্য নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। লবণমুক্তকরণ: সাম্প্রতিককালে পৃথিবীতে সমুদ্রের লবণমুক্ত জলের সামগ্রিক পরিমাণ দৈনিক গড়ে প্রায় 4.5 কোটি গ্যালন। প্রধানত রিভার্স ওসমোসিস্ ও মাইক্রোফিলট্রেশন পদ্ধত

জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা

জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা (Watershed Management) জলবিভাজিকার সংজ্ঞা:  বিভিন্ন জলবিজ্ঞানী ও ভূমিরূপবিদদের মতে, দুটি সংলগ্ন নদী প্রণালীর মধ্যে অবস্থানকারী বিভাজন রেখা, যেমন-শৈলশিরাকে জলবিভাজিকা বলে। একটি নদীর ধারণ অববাহিকা জলবিভাজিকার মাধ্যমে অন্য একটি নদীর ধারণ অববাহিকা থেকে পৃথক হয়। উদাহরণ: গ্যা নদীর ধারণ অববাহিকার উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে হিমালয় পর্বত ও বিন্ধা-মৈকাল-কাইমুর পর্বত। জলবিভাজিকা নদীর ধারণ অববাহিকার আয়তন, সীমানা ও অবস্থান জানতে সাহায্য করে। জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনার ধারণা:  জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা বলতে কোনো একটি নদীর ধারণ অববাহিকার বাস্তুতান্ত্রিক ও আর্থসামাজিক উপাদানের উন্নতি বিধানের জন্য গৃহীত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক পরিকল্পনাকে বোঝানো হয়। অন্যভাবে বলা যায়, নদীর ধারণ অববাহিকার প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য যে সামগ্রিক ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা বলে। উদাহরণ: দামোদর নদীর ওপর বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা এইরূপ ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদাহরণ। ধারণ অববাহিকা :  নদী যে অঞ্চলের জল বয়ে নিয়ে যায়, তাকে ওই নদীর ধারণ অববাহিকা

কূপ ও নলকূপ সেচ

কূপ ও নলকূপ সেচ (Well and Tubewell Irrigation) ভারতের যেসব স্থানে ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে ভৌম জলস্তর অবস্থান করে সেখানে তৌমজল উত্তোলনের মাধ্যমে জলসেচ করার জন্য কূপ ও নলকূপ তৈরি করা হয়। সেচসেবিত অঞ্চলসমূহ : কূপের সাহায্যে প্রধানত সর্বাধিক সেচকাজ হয় উত্তরপ্রদেশে (প্রায় 28.6%), দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থান (প্রায় 10.7%) এবং তৃতীয় স্থানে আছে পাঞ্জাব (প্রায় 9.2%)। এ ছাড়া মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যে কূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। অন্যদিকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যেও জলসেচের ক্ষেত্রে নলকূপের ব্যবহার যথেষ্ট মাত্রায় লক্ষ করা যায়। উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে সেচের প্রচলন অপেক্ষাতে বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতে কঠিন শিল্পস্তর, তরঙ্গায়িত ভূমিভাগ ও ভৌমজলের অধিক গভীরতায় অবস্থান প্রভৃতি কারণে। কৌশল : প্রাচীনযুগ থেকে ভারতে কূপ ও নলকূপের ব্যবহার প্রচলিত। (a) কূপ (Well): (i) সাধারণ কূপ থেকে কপিকলের সাহায্যে জল তোলা যায়। (ii) প্রাচীন পদ্ধতির ক্ষেত্রে টিনের বিশাল পাত্র বা মোষের চামড়া দিয়ে তৈরি থলির সাহায্যে জল তোলা হয়। (iii) পার্সিয়ান হুইল পদ্ধতিতে পশুশ

জলাশয় সেচ

জলাশয় সেচ (Tank Irrigation) ভারতের দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চলের তরঙ্গায়িত ভূমিভাগের অনেক নীচু অংশে বৃষ্টির জল সঞ্চিত হয়ে জলাশয় গড়ে তোলে। এ ছাড়া ভারতের পূর্বে বিভিন্ন জলাশয় যেমন- পুকুর, হ্রদ প্রভৃতি থেকে জল উত্তোলনের মাধ্যমেও জলসেচ করা যায়। সেচসেবিত অঞ্চলসমূহ: ভারতের দক্ষিণে তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে বহুল পরিমাণে এবং পূর্বদিকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, অসম প্রভৃতি রাজ্যে সামান্য পরিমাণে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। এই পদ্ধতিতে সেচকার্যে অস্ত্রপ্রদেশ প্রথম (503 হাজার হেক্টর) ও তামিলনাড়ু (620 হাজার হেক্টর) দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। কৌশল: জলাশয়গুলি থেকে পাম্প, ডোঙা প্রভৃতির মাধ্যমে জল উত্তোলন করে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হয়। জলাশয় সেচ শ্রেণিবিভাগ:  জলাশয় প্রধানত দুই প্রকার। যেমন-(a) প্রাকৃতিক জলাশয় ও (b) কৃত্রিম জলাশয়। (a) প্রাকৃতিক জলাশয় (Natural Tank): প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বিল, পুকুর, দিঘি প্রভৃতি জলাশয়কে প্রাকৃতিক জলাশয় বলে। (b) কৃত্রিম জলাশয় (Artificial Tank): আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বা নদী সংলগ্ন স্থানে মৃত্তিকা খনন করে কৃত্রিম উপায়ে যে জলাশয় সৃষ্টি করা হয়, তাকে কৃত্রিম জলা

পাকিস্তানের জলসেচ

পাকিস্তানের জলসেচ (Irrigation of Pakistan) পাকিস্তান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জলসেচ কার্যকরী দেশ রূপে পরিচিত। এই দেশে সেচের আওতাধীন অঞ্চলের আয়তন প্রায় 1,50,000 বর্গকিমি। এখানে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের বেশিরভাগই সিন্ধু নদ (65%) থেকে উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তানে জলসেচের প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রায় 16 টি বাঁধ, 3 টি বড়ো জলাধার, প্রায় 56073 কিমি দীর্ঘ 44 টি প্রধান খাল ও প্রায় 5,50,000 টি নলকূপ গড়ে তোলা হয়েছে। অত্যন্ত শুষ্ক প্রকৃতির জলবায়ু অধ্যুষিত এই দেশে কৃষিকাজ প্রধানত জলসেচের উপর নির্ভর করে। আরও পড়ুন-:  মিশরের জলসেচ পাকিস্তানে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Irrigation in Pakistan) (i) পাকিস্তানের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট হওয়ায় এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদনের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয়। (ii) পাকিস্তানের অধিকাংশ স্থান সিন্ধু নদের বয়ে আনা নরম পলিমাটি দ্বারা গঠিত, যেখানে সহজেই কূপ ও নলকূপ খনন করা সম্ভব হয়। (iii) এই দেশের বেশিরভাগ অংশে সমভূমি থাকায় জলসেচের গুরুত্ব অপরিসীম। (iv)  এখানকার নদীগুলি অনিত্যবহ প্রকৃতির হওয়ায় নদীতে বাঁধ দিয়ে বর্ষার অতিরিক্ত জলকে বাঁধের পিছ

মিশরের জলসেচ

সাহারা সমভূমির পূর্বদিকে অবস্থিত মিশর মরু জলবায়ুর প্রভাবাধীন একটি দেশ। দেশের অনেকাংশই উল্ল, রুক্ষ, শুষ্ক ও বালুকাময়। তবে এই মরুদেশটি কৃষিকাজের উপযোগী হয়ে উঠেছে নীলনদের প্রভাবে। প্রধানত নীলনদের জলের সাহায্যেই মিশরে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।  মিশরে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Irrigation in Egypt) ① মিশরের অধিকাংশ স্থান মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানে ফসল উৎপাদনের জন্য জলসেচ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন। ② মিশরের অর্থনীতি অনেকাংশ কৃষিনির্ভর। তাই আখ, কার্পাস, প্রভৃতির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জলসেচের প্রয়োজন। ③ নীলনদ ছাড়া মিশরে অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য নদী না থাকায় জলসেচ ব্যবস্থার ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ④ মিশরের বছরে গড়ে প্রায় 25 সেমি-এর কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের প্রয়োজন হয়। ⑤ বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় সারাবছর কৃষিজমিতে জলসেচের দরকার হয়।  মিশরে জলসেচের বিভিন্ন কৌশল (Different Techniques of Irrigation) মিশরে নীলনদের অপরিসীম গুরুত্বের বিচারে মিশরকে 'নীলনদের দান' (Gift of the Nile) বলা হয়। মিশরের জলসেচ পদ্ধতি প্রধানত নীলনদকে ভিত্তি করে ন

খনিজ সম্পদের প্রকারভেদ

খনিজ সম্পদের প্রকারভেদ প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে খনিজ সম্পদকে নিম্নলিখিত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়- • ধাতব খনিজ (Metallic Minerals): যেসব খনিজ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়, তাদের ধাতব খনিজ বলা হয়। ওজন হ্রাসশীল কাঁচামাল হিসেবে শিল্পে ধাতব খনিজের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এগুলিকে তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত করা যায়- (a) লৌহবর্গীয় খনিজ (Ferrous Minerals): যে ধাতব খনিজগুলিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকে, তাকে লৌহবর্গীয় খনিজ বলে। যেমন-ম্যাগনেটাইট, হেমাটাইট প্রভৃতি। (b) লৌহ-সংকর খনিজ (Ferro-Alloy Minerals): লোহার সঙ্গে যে ধাতব খনিজকে মিশ্রিত করে সংকর লোহা ও ইস্পাত তৈরি করা হয়, তাকে লৌহ-সংকর খনিজ বলে। যেমন-সিসা, তামা, টিন, দস্তা প্রভৃতি। (c) অ-লৌহবর্গীয় খনিজ (Non-Ferrous Minerals): যেসমস্ত ধাতব খনিজ থেকে লোহা জাতীয় ধাতু বা লোহা ছাড়া অন্য কোনো ধাতু পাওয়া যায়, তাদের অ-লৌহবর্গীয় খনিজ বলে। যেমন-বক্সাইট, টিন, তামা প্রভৃতি। • অধাতব খনিজ (Non-Metallic Minerals): যেসব খনিজ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না, তাদের অধাতব খনিজ বলে। অনুজ্জ্বল প্রকৃতির এই খনিজগুলি সরাসরি শিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়। ধাতব খনিজ আবার তি

খনিজ সম্পদ

ভূমিকা: খনিজ ও শক্তি সম্পদ আধুনিক শিল্প ও সভ্যতার বুনিয়াদ রচনা করে। অতীতে 'তাম্রযুগ' থেকেই খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সূত্রপাত ঘটে। শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন খনিজ ও শক্তি সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কোনো স্থানের অর্থনৈতিক বিকাশ সেই স্থানের খনিজ ও শক্তি সম্পদের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে। খনিজ সম্পদ (Mineral Resource) খনিজের ধারণা (Concept of Minerals) খনিজ হল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট রাসায়নিক যৌগ, যা সাধারণত কেলাস গঠনযুক্ত। অজৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খনিজের একটি সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন হয়েছে। 2017 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে বলা যায়, পৃথিবীতে প্রায় 5300 প্রকার খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। • বৈশিষ্ট্য : খনিজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল- পৃথিবীর সর্বত্র সমস্ত খনিজ সম্পদ সমানভাবে পাওয়া যায় না। ② মানুষের দক্ষতা ও কারিগরি কৌশলের দ্বারা খনিজ সম্পদের ব্যবহারযোগ্যতা নির্ধারিত হয়। ③ কয়লা ও খনিজতেল ছাড়া অধিকাংশ খনিজ সম্পদ অজৈব প্রকৃতির। খনিজ সম্পদ অপুনর্ভব প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থাৎ বারংবার ব্যবহারের ফলে এগুলি ফুরিয়ে যেতে পারে। কোনো অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের ওপর খনিজ সম্পদের প

খনিজ তেল

 খনিজ তেল (Petroleum)  উৎপত্তি: প্রায় 7-৪ কোটি বছর পূর্বে আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া, সামুদ্রিক প্রাণী, উদ্ভিদ কোশ প্রভৃতি টার্সিয়ারি যুগের পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে চাপা পড়ে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া, তাপ ও চাপের প্রভাবে কার্বন ও হাইড্রোজেন মিশ্রিত যে যৌগ তৈরি হয়, তাকে পেট্রোলিয়াম বলা হয়।  খনিজ তেলর প্রাপ্যতা :  খনিজ তেল প্রধানত সচ্ছিদ্র প্রকৃতির বেলেপাথরে সঞ্চিত থাকে। ভূ-অভ্যন্তরে জল, তেল ও গ্যাস-এই তিনটি স্তরের অবস্থান লক্ষ করা যায়। জল ভারী হওয়ায় নীচে এবং তার ওপরে তেল ও গ্যাস অবস্থান করে। খনিজ তেল প্রধানত-① চ্যুতিরেখা অনুসারে, ② ভাঁজের ঊর্ধ্বভঙ্গে, ও শিলাস্তরীয় অসংগতি তল অনুসারে, ④ লবণ গম্বুজের প্রান্তভাগ বরাবর-এই চার প্রকার ভূতাত্ত্বিক গঠনে সঞ্চিত থাকে। খনিজ তেলর অন্যান্য নাম:  খনি থেকে সংগ্রহ করায় পেট্রোলিয়ামকে খনিজ তেল বলে। পেট্রোলিয়াম শব্দটি মূলত লাতিন শব্দ 'Petra' (যার অর্থ শিলা) এবং 'Oleum' (যার অর্থ তেল)-এর সমন্বয়ে গঠিত। পেট্রোলিয়াম উত্তোলনের সময় এর বর্ণ থাকে তেল মিশ্রিত কাদামাটির মতো কালো বা গাঢ় খয়েরি, যা অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) নামে পরিচিত। কার্বন (প্রায় 87%-90%) ও

কয়লা

কয়লার বৈশিষ্ট্য:  কয়লা একটি ওজন হ্রাসশীল, গচ্ছিত, ক্ষয়িয়, অপুনর্ভব সম্পদ। কয়লা এমন এক জীবাশ্ম জ্বালানি, যা অতীতে ও বর্তমানে পৃথিবীর বহু স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও পরিবহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কয়লার গুরুত্বের প্রেক্ষিতে একে কালো হিরে (Black Diamond) বলে। কয়লা উপাদান:  কয়লার অন্যতম উপাদান হল কার্বন। উৎকৃষ্ট মানের কয়লায় কার্বনের পরিমাণ থাকে সব থেকে বেশি (প্রায় 95%), যেমন-কার্বনিফেরাস যুগের কয়লা। অন্যদিকে নিকৃষ্ট প্রকৃতির কয়লায় কার্বনের পরিমাণ থাকে প্রায় 30% যেমন-টার্সিয়ারি যুগের কয়লা। কার্বন ছাড়া কয়লার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল সালফার, উদ্বায়ী পদার্থ, জলীয় বাষ্প, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং কিছু অদাহ্য পদার্থ।  কয়লার উৎপত্তি:  পৃথিবীর বেশিরভাগ কয়লা কার্বনিফেরাস যুগের বনভূমি ভূগর্ভে চাপা পড়ে ভূ-অভ্যন্তরস্থ চাপ ও তাপের প্রভাবে উৎপন্ন হয়েছে। প্রধানত পাললিক বা স্তরীভূত শিলায় চাপা পড়ে যাওয়া উদ্ভিদ মধ্যস্থ কার্বন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কয়লায় রূপান্তরিত হয়। কয়লা এক প্রকার স্তরীভূত জৈব শিলা কোক কয়লা (Coke Coal):   বিটুমিনাস কয়লাকে অত্যধিক উন্নতায় গলিয়ে অঙ্গারী

ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম

বৈশিষ্ট্য: ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম এমন এক ক্ষয়িম্ভু ও অপুনর্ভব প্রকৃতির সম্পদ, যা পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থোরিয়াম সুনির্দিষ্ট স্থানে মোনাজাইট বালি থেকে এবং ইউরেনিয়াম ভূগর্ভ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইউরেনিয়ামের তিনটি আইসোটোপ হল 238, 235, 234। • ব্যবহার ও গুরুত্ব: ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামকে নিম্নলিখিত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে- ① পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, ② কৃত্রিম উপগ্রহে শক্তির জোগান দেওয়া, ③ যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন এবং বিভিন্ন শিল্পে জ্বালানি সরবরাহ, ভূতাপ শক্তি উৎপাদন, ১ ম্যাঙ্গানিজ ও তামা নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে। • পৃথিবীতে ইউরেনিয়ামের বণ্টন (World Distribution of Uranium): 2015 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ইউরেনিয়াম উৎপাদন সম্পর্কে নীচে উল্লেখ করা হল। 2015 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে সামগ্রিক ইউরেনিয়াম (ধাতুযুক্ত) উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় 60,496 টন।  অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহ: ইউরেনিয়াম উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-ভাসকেজ, ক্রোবাট, নিউমেক্সিকো; ইউক্রেন-ইঙ্গুলাস্কি, ভাতৃতি নিষ্কি; ভারত-যদুগোডা, নারোয়া পাহাড়, ভাতিন, আজমির

শক্তি সম্পদ

শক্তি সম্পদ ভূমিকা:  শক্তি বলতে কোনো কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে শক্তিসম্পদ বলতে এমন সমস্ত পদার্থকে বোঝানো হয় যেগুলি বল প্রয়োগ বা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম। আধুনিক যুগে জৈব শক্তির তুলনায় জড় শক্তির প্রয়োগ বেশি, কারণ জড়শক্তির কার্যকারিতা জৈব শক্তির তুলনায় অনেক বেশি। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে জড় শক্তির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।  শক্তি সম্পদের প্রকারভেদ (Types of Power Resources) বিভিন্ন নির্ধারকের ভিত্তিতে শক্তি সম্পদকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়- উৎসের ভিত্তিতে : শক্তিকে উৎসের ভিত্তিতে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- জৈব শক্তি সম্পদ (Animate Energy Resource): যে শক্তির উৎস জীবদেহ, তাকে জৈব শক্তি বলে। যেমন-পশুশক্তি, মানুষের কায়িক শক্তি। জড় শক্তি সম্পদ (Inanimate Energy Resource): যে শক্তির উৎস অজৈব পদার্থ, তাকে জড় শক্তি বলে। যেমন-কয়লা, সৌররশ্মি, ভূতাপ প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত শক্তি। ক্ষয়িষ্ণুতার ভিত্তিতে : অপুনর্ভব বা গচ্ছিত শক্তি সম্পদ (Non-renewable or Fund Energy Re- source): পৃথিবীতে যেসব শক্তি সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে যায় এবং যেসব শক্তি সম্পদের সঞ্চয় ভাণ্