পোস্টগুলি

দর্শন 11 লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বাচনিক জ্ঞান বলতে কী বোঝ? বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো।

বাচনিক জ্ঞান  'জানা' নামক ক্রিয়াপদটির তিনটি প্রয়োগক্ষেত্র বিদ্যমান-পরিচিতিমূলক জ্ঞান, কর্মকুশলতামূলক জ্ঞান এবং বাচনিক জ্ঞান। বাচনিক জ্ঞান হল অপর দুইপ্রকার জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত (Necessary condition)। তাই বলা যায়, এই তিনপ্রকার জ্ঞানের মধ্যে বাচনিক জ্ঞানই হল মূল এবং অপর দুটি হল তার সহযোগী মাত্র। আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে এই বাচনিক জ্ঞানের উপরই অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অপর দুইপ্রকার জ্ঞানকে যদি জ্ঞানের বা 'জানার' পর্যাপ্ত বা সম্ভাব্য শর্ত (Sufficient condition) রূপে অভিহিত করা হয়, তবে বাচনিক জ্ঞানকে অবশ্যই অনিবার্য বা আবশ্যিক শর্তরূপে গণ্য করা উচিত। বাচনিক জ্ঞানের শর্তসমূহ দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা জ্ঞান বলতে মূলত বাচনিক জ্ঞানকেই বুঝে থাকি। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোন্ কোন্ শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা যায়? অথবা, বলা যেতে পারে যে, বাচনিক জ্ঞানের কোন্ কোন্ শর্তগুলির মধ্যে একটিও অনুপস্থিত থাকলে জ্ঞান হবে না? অথবা বলা যায় যে, পর্যাপ্ত শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ কোন্ শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা যাবে? আরও সহজ করে বলা যায়, বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শর্তগু

বিশ্লেষক বচন কী তা উদাহরণ-সহ উল্লেখ করো। বিশ্লেষক বচনের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

বিশ্লেষক বচন আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান প্রকাশিত হয় বাক্য বা বচনের মাধ্যমে। আমরা যাকে বৈয়াকরণিক অর্থে বাক্য বলি, তাকেই তর্কবিজ্ঞানসম্মত অর্থে বচন বলা হয়। বচনকে তাই জ্ঞানের প্রকাশকরূপে উল্লেখ করা হয়। প্রত্যেকটি বচন তাই জ্ঞানের মাধ্যমে পাওয়া একটি তথ্যকে উল্লেখ করে। বচনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভক্ত করা হয়। একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বচনকে দু- ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেㅡ[1] বিশ্লেষক বচন (analytic proposition), এবং [2] সংশ্লেষক বচন (synthetic proposition)। প্রত্যেকটি বচনেই একটি উদ্দেশ্য পদ এবং একটি বিধেয় পদ থাকে। উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে বিধেয় পদে কিছু বলা হয় বা ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে যা ঘোষণা করা হয় তা নতুন কিছু হতে পারে, আবার নতুন কিছু না-ও হতে পারে। যদি বিধেয়টি নতুন কিছু না হয় তাহলে উদ্দেশ্যের ধারণার মধ্যেই বিধেয়ের বিষয়টি নিহিত থাকে। অর্থাৎ, সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করলেই বিধেয় পদটি পাওয়া যায়। বিধেয়টি তাই এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যের বিশ্লেষকরূপেই গণ্য, নতুন কোনো তথ্যরূপে গণ্য নয়। এই ধরনের বচনগুলিকে বলা হয় বিশ্লেষক বচন। সংজ্ঞা : যে বচনের বিধেয়ের ধারণাটি উদ্দেশ্যের ধারণার মধ্যে নিহিত থাকে

সংশ্লেষক বচন কী তা উদাহরণ-সহ অলোচনা করো। এর লক্ষণগুলি কী?

সংশ্লেষক বচন যুক্তিবিজ্ঞানে ব্যবহৃত বচনগুলি যেমন বিশ্লেষক হতে পারে, তেমনই সেগুলি আবার সংশ্লেষকরূপেও গণ্য হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সংশ্লেষক বচন কাকে বলে? সংশ্লেষক বচনের ধারণাটিকে সংজ্ঞার মাধ্যমে উল্লেখ করা যায়। সংজ্ঞা : যে বচনে উদ্দেশ্যের ধারণাটিকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয়ের ধারণাটি পাওয়া সম্ভব নয় এবং বিধেয়টি উদ্দেশ্য সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য প্রদান করে-সেই বচনকেই বলা হয় সংশ্লেষক বচন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যের ধারণাটি বিধেয়ের ধারণার মধ্যে কখনোই নিহিত নয়। সংশ্লেষক বচনের ধারণাটি তাই অবশ্যই নতুন কোনো তথ্যজ্ঞাপকরূপেই গণ্য। আমরা সাধারণত অভিজ্ঞতার সাহায্যেই এরূপ তথ্যকে পেয়ে থাকি। উদাহরণ : [1] এই ফুলটি হয় গোলাপি। [2] মানুষ হয় মরণশীল ইত্যাদি। ব্যাখ্যা : এই দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, বচন দুটির বিধেয় পদ কখনোই বচন দুটির উদ্দেশ্য পদ থেকে বিশ্লেষণ করে পাওয়া না। এই দুটি পদই আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাওয়া নতুন দুটি তথ্যকে উল্লেখ করে। এই দুটি তথ্য তাই এমন দুটি গুণকে নির্দেশ করে যেগুলি উদ্দেশ্য দুটি থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত নয়। এই বিষয় দুটি হল অভিজ্ঞতালব্ধ নতুন দুটি বিষয়। কারণ, প্রথম উ

পূর্বতঃসিদ্ধ বচন বা বাক্য কী? পূর্বতঃসিদ্ধ বচনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী?

পূর্বতঃসিদ্ধ বচন বা বাক্য আমাদের সমস্তপ্রকার বাচনিক জ্ঞান ব্যক্ত হয় বাক্য বা বচনের মাধ্যমে। আবার আমাদের জ্ঞানও যেহেতু বিভিন্নরকম, সেহেতু বাক্য বা বচনের ব্যবহারও বিভিন্ন রকমের। বিভিন্নপ্রকার জ্ঞানের কথা বলতে হলে তাই বিভিন্নপ্রকার বাক্য বা বচনের কথাও বলতে হয়। বাক্য বা বচনকে তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভক্ত করা যায়। একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্য বা বচনকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়- [1] পূর্বতঃসিদ্ধ বচন (A-Priori proposition) এবং [2] পরতঃসাধ্য বচন (A-Posteriori proposition)। পূর্বতঃসিদ্ধ বচনকে অভিজ্ঞতাপূর্ব বচনরূপেও উল্লেখ করা হয়। পূর্বতঃসিদ্ধ শব্দটির অর্থ হল অভিজ্ঞতার পূর্ব থেকে যা সিদ্ধ বা প্রমাণিত, তা-ই পূর্বতঃসিদ্ধ। এখানে পূর্বত শব্দটির দ্বারা অভিজ্ঞতার পূর্বে বা আগের বিষয়কে বোঝানো হয়েছে, এবং সিদ্ধ শব্দটির দ্বারা প্রমাণিত জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে। সেকারণেই অভিজ্ঞতাপূর্ব বা পূর্বতঃসিদ্ধ বচনের সংজ্ঞাটিকে নীচের আকারে উল্লেখ করা যায়। সংজ্ঞা: যে জ্ঞানের সত্যতা কখনোই আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর না করে, অভিজ্ঞতা-নিরপেক্ষভাবেই জানা যায়, সেই বচনকেই বলা হয় পূর্বতঃসিদ্ধ বচন। অর্থাৎ, এই ধরনের বচনের

পরতঃসাধ্য বচন বা বাক্য কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী?

পরতঃসাধ্য বচন বা বাক্য পরতঃসাধ্য বাক্য বা বচনকে অভিজ্ঞতাপ্রসূত বচনরূপেও উল্লেখ করা হয়। পরতঃসাধ্য বচনটির শব্দগত অর্থ হল-যা অভিজ্ঞতার পরে প্রমাণিত, তা-ই হল পরতঃসাধ্য। এখানে 'পরত' শব্দটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে অভিজ্ঞতার পরের বিষয়কে এবং 'সাধ্য' শব্দটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে প্রমাণিত বিষয়কে। সেকারণেই অভিজ্ঞতার পর বা পরতঃসাধ্য বচনের সংজ্ঞাটিকে নীচের আকারে উপস্থাপিত করা যায়। সংজ্ঞা: যে বচনের সত্যতা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে, সেই বচনকেই বলা হয় পরতঃসাধ্য বচন। অর্থাৎ এই ধরনের বচনের সত্যতা জানার একমাত্র মাপকাঠি হল অভিজ্ঞতা। সেকারণেই বলা যায় যে, কোনো বচন পরতঃসাধ্য কি না এবং তার সত্যতা কীরূপ-তা অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জানা যায়।  সংশ্লেষকরূপে পরতঃসাধ্য বচন: পরতঃসাধ্য বচনকে আবার সংশ্লেষকরূপেও উল্লেখ করা হয়। কারণ, পরতঃসাধ্য বচন হল অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞানের প্রকাশ। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞান আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে নতুন নতুন বিষয়ে সংযুক্ত করে। এই ধরনের বচনপ্রসূত জ্ঞান কোনো কোনো সময় সত্য, আবার কোনো কোনো সময় মিথ্যা হয়। এরূপ জ্ঞান তাই কখনোই অবশ্যিকরূপে গণ্য নয়। এগুলি তাই আপত

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত স্পিনোজার মতবাদ আলোচনা করো।

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত স্পিনোজার মতবাদ প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক স্পিনোজা হলেন একজন বুদ্ধিবাদী দার্শনিক। তিনি বিশ্বাস করেন যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের মৌল উৎস। অর্থাৎ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই আমরা নিশ্চিত ও যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারি। তাঁর মতে, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং সেকারণেই তা জ্ঞানের মর্যাদালাভে সমর্থ নয়। যথার্থ জ্ঞান তাই কখনোই অভিজ্ঞতালব্ধ নয়, অবশ্যই বুদ্ধিলব্ধ। মূল উৎস হিসেবে 'সহজাত ধারণা':  দেকার্তের মতো স্পিনোজাও দাবি করেন যে, আমাদের যথার্থ ও নিশ্চিত জ্ঞানের মৌল উৎস হল সহজাত ধারণা এবং এই সহজাত ধারণাগুলি হল অবশ্যই বুদ্ধিলব্ধ। দেকার্ত অবশ্য এই সহজাত ধারণা ছাড়া আগন্তুক ও কৃত্রিম ধারণা নামক আরও দু-প্রকার ধারণাকে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই সমস্ত ধারণাপ্রসূত জ্ঞানকে তিনি অযথার্থ জ্ঞানরূপে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং দেখা যায় যে, দেকার্ত যথার্থ এবং অযথার্থ-এই দু-প্রকার জ্ঞানের উল্লেখ করেছেন। দেকার্তকে অনুসরণ করলেও স্পিনোজা কিন্তু তিনপ্রকার জ্ঞানের কথা বলেছেন। এই তিনপ্রকার জ্ঞান হল যথাক্রমে-[1] অসম্পূর্ণ জ্ঞান যা অযথার্থরূপে গ্রাহ্য

জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত লাইবনিজের অভিমত কী?

জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত লাইবনিজের অভিমত প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক লাইবনিজ হলেন চরম বুদ্ধিবাদী দার্শনিক। তাঁর মতে, বুদ্ধিই হল জ্ঞানের মৌল উৎস। কারণ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারাই যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায়। পূর্বসূরিদের মতো তিনিও দাবি করেন যে, অভিজ্ঞতার দ্বারা আমরা কখনোই যথার্থ জ্ঞান পেতে পারি না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, তা অবশ্যই অযথার্থ ও সংকীর্ণ। শুধু বুদ্ধিই হল যথার্থ জ্ঞানের নির্ণায়ক। বুদ্ধি ছাড়া আর অন্য কোনোভাবেই প্রকৃত জ্ঞানলাভ সম্ভব নয়। জ্ঞানের প্রকারভেদ:  লাইবনিজ বুদ্ধিলব্ধ সত্য (truths of reason) এবং তথ্যলব্ধ সত্য (truths of fact)-এই দু-প্রকার জ্ঞানের উল্লেখ করেছেন। [1] বুদ্ধিলব্ধ সত্য: লাইবনিজের মতে, প্রথমপ্রকার সত্য প্রকাশিত হয় আবশ্যিক বচনের মাধ্যমে। কারণ, আবশ্যিক বচনগুলি স্বতঃসিদ্ধ (self-evident) অথবা তার থেকে নিঃসৃত বচনরূপে গণ্য। আবশ্যিক বচনগুলির বিরোধী বচনগুলি অবশ্যই মিথ্যা হয়। সুতরাং, সমস্ত বুদ্ধিলব্ধ সত্য আবশ্যিকভাবেই সত্য এবং সেগুলির সত্যতা বিরোধনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।  [2 ] তথ্যলব্ধ সত্য: তথ্যলব্ধ সত্যগুলি কখনোই আবশ্যিক বচনের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে না।

বুদ্ধিবাদ কাকে বলে? জ্ঞানের স্বরূপ বিষয়ে বুদ্ধিবাদের মূল তত্ত্বগুলি আলোচনা করো।

বুদ্ধিবাদ জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে-সমস্ত দার্শনিক মতবাদ রয়েছে, তাদের মধ্যে বুদ্ধিবাদ হল অন্যতম। বুদ্ধিবাদ অনুযায়ী বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস। অর্থাৎ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনো উৎস নেই। জ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট্য হল অভ্রান্ততা ও সর্বজনীনতা। জ্ঞানের অভ্রান্ততা ও সর্বজনীনতা প্রকাশিত হয় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই। তাই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা হয়। জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য প্রাচীন বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পারমিনাইডিস, সক্রেটিস এবং প্লেটো প্রমুখ। তাঁদের মতে, যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায় হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা (wisdom)। দাবি করা যায় যে, আমরা সামান্য ধারণার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করি, আর এই সামান্য ধারণা আমরা পাই বুদ্ধির মাধ্যমেই। আধুনিক বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত, ব্রিটিশ দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনোজা, গফ্রেড উইলহেম লাইবনিজ প্রমুখ। প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ভলফ এবং কান্টের নামও এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই সমস্ত দার্শনিক স্বীকার করেন যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা

জ্ঞানের স্বরূপ বিষয়ে দেকার্তের বক্তব্য সমালোচনা- সহ ব্যাখ্যা করো।

জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত দেকার্তের মতবাদ বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে, বুদ্ধিই হল জ্ঞানের মৌল উৎস। বুদ্ধিকে জ্ঞানের মূল উৎসরূপে স্বীকার করে নিলেও বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা দু- ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন- [1] চরমপন্থী ও [2] নরমপন্থী। চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস। এ ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনো উৎস নেই। চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত। রেঁনে দেকার্ত আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনকরূপেও গণ্য। জ্ঞানের একমাত্র উৎস হিসেবে বুদ্ধি:  চরমপন্থী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক দেকার্ত মনে করেন যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস। কারণ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারা যে জ্ঞান পাওয়া যায় তা যথার্থ, সুনিশ্চিত, অনিবার্য ও সর্বজনীনরূপে গণ্য। দেকার্তের মতে, ইন্দ্রিয় সংবেদনের দ্বারা কখনোই সার্বিক জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। বিশুদ্ধ বুদ্ধিই কেবল আমাদের সার্বিক জ্ঞান প্রদান করতে পারে। আদর্শ জ্ঞান হিসেবে গাণিতিক জ্ঞান:  দেকার্ত জ্ঞানের মাপকাঠি হিসেবে স্পষ্টতা, স্বচ্ছতা ও প্রাঞ্জলতার কথা উল্লেখ করেন। অর্থাৎ, তাঁর মতে, জ্ঞানরূপে কোনো

নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য কী তা উল্লেখ করো।

নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয় সংবেদন জ্ঞানের একটি মুখ্য ও নির্ভরযোগ্য উৎসরূপে গণ্য হলেও অপরাপর উৎসের মাধ্যমেও জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। অর্থাৎ, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেও জ্ঞানলাভ হতে পারে। নরমপন্থী বুদ্ধিবাদীরা জ্ঞানের উৎস সম্বন্ধীয় আলোচনায় অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির ভূমিকাকেও স্বীকার করে নিয়েছেন। নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদীরূপে শীর্ষস্থান অধিকার করে আছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম। দু-প্রকার জ্ঞানের স্বীকৃতি:  নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম দু-প্রকার জ্ঞানকে স্বীকার করেছেন। এই দু-প্রকার জ্ঞানের একটি হল অভিজ্ঞতানির্ভর তথ্যমূলক জ্ঞান (knowledge about matters of fact) এবং অপরটি হল বুদ্ধিনির্ভর ধারণার সম্বন্ধ বিষয়ক জ্ঞান (knowledge about relation of ideas)।  [1] অভিজ্ঞতানির্ভর তথ্যমূলক জ্ঞান:   এই প্রকারের জ্ঞান লাভ করা যায় মূলত ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। তাই এধরনের জ্ঞানগুলি কখনোই সুনিশ্চিতরূপে গণ্য নয়। এগুলি সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। অর্থাৎ এগুলি আপতিকরূপেই গণ্য। 'সূর্য উদিত হয়েছে'-এটি হল একটি অভি

হিউমের নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ আলোচনা করো।

হিউমের নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ প্রখ্যাত দার্শনিক ডেভিড হিউম হলেন একজন খাঁটি অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। অভিজ্ঞতাবাদী লক এবং বার্কলের অভিজ্ঞতাবাদের চরম পরিণতি লক্ষ করা যায় হিউমের দর্শনে। দর্শনের ইতিহাসে হিউম একজন প্রকৃত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরূপে গণ্য। কারণ, অভিজ্ঞতাবাদের চরম পরিণতি কী হতে পারে, তা তিনি তাঁর দর্শনচিন্তায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। অবশ্য এরূপ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কিছু অসংগতি পরিলক্ষিত হয় এবং সেকারণেই তাঁকে কঠোর অভিজ্ঞতাবাদীরূপে গণ্য না করে, নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদীরূপেই উল্লেখ করা হয়। অভিমুদ্রণ ও ধারণার মাধ্যমে জ্ঞানের গঠন:  হিউমের মতে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান উৎসারিত হয় অভিজ্ঞতা থেকে। অভিজ্ঞতা বলতে হিউম ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণকেই বুঝিয়েছেন। ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণকে তিনি দু- ভাগে বিভক্ত করেছেন- [1] অভিমুদ্রণ বা ইন্দ্রিয়জ (impression) এবং [2] ধারণা (idea)। অভিমুদ্রণ তথা ইন্দ্রিয়জ বলতে তিনি সাক্ষাৎভাবে ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণকেই বুঝিয়েছেন, আর ধারণা বলতে তিনি পরোক্ষ ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণকে উল্লেখ করেছেন। ধারণা হল ইন্দ্রিয়জের ক্ষীণ প্রতিরূপস্বরূপ। প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয়জের মাধ্যমে আমরা একটা ধারণা গঠন করি।

অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে?

অভিজ্ঞতাবাদ জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে যে-সমস্ত মতবাদের উল্লেখ করা যায়, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদ (empiricism) হল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। অভিজ্ঞতাবাদ মূলত বুদ্ধিবাদের একটি বিরোধী মতবাদরূপেই গণ্য। অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য হল, আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস (sense experience is the only source of knowledge)। অভিজ্ঞতাবাদ বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে বর্জন করে শুধু ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে দাবি করে। অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থকদের বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদী (empiricists)। জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য:  চরমপন্থী বা নরমপন্থী যাই হোক না কেন, সমস্ত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের বক্তব্যের মধ্যেই কয়েকটি মূল সুর উঠে আসে। সেগুলিকেই অভিজ্ঞতাবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়রূপে গণ্য করা হয়। অভিজ্ঞতাবাদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল- জ্ঞানের মুখ্য উৎস হিসেবে অভিজ্ঞতা:  অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের মুখ্য উৎস। এই ইন্দ্রিয়ানুভবকে বাদ দিয়ে কখনোই জ্ঞান লাভ করা যায় না। অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে, বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা বা বুদ্ধ

চরমপন্থী ও নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের বিষয়টি আলোচনা করো।

চরমপন্থী ও নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের ধারণা অভিজ্ঞতাবাদের মূল কথা হল অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের মূল উৎস। অর্থাৎ, মূলত অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আমরা জ্ঞান লাভ করে থাকি। কিন্তু অভিজ্ঞতার প্রকৃতি বা স্বরূপ সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ কখনোই ঐকমত্য পোষণ করেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতাবাদের দুটি রূপ লক্ষ করা যায়-চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ (extreme empericism) এবং নরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ (moderate empericism)। চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ:  চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ তথা দৃষ্টিবাদ অনুযায়ী আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতা। এই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ছাড়া আমরা আর অন্য কোনোভাবেই জ্ঞান লাভ করতে পারি না। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ানুভব ছাড়া জ্ঞানলাভের আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের আদি প্রবক্তা হলেন ফ্রান্সিস। বেকন। এই মতবাদটি চরম পরিণতি পায় জন স্টুয়ার্ট মিলের বক্তব্যে। [1] জ্ঞানমাত্রেই ইন্দ্রিয় সংবেদনজাত :  চরমপন্থী মিল দাবি করেন যে, আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের উৎস। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয় সংবেদন ছাড়া আমরা আর অন্য কোনোভাবেই জ্ঞান লাভ করতে পারি না। তিনি আরও দা

চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য কী? এরূপ মতবাদটি কি গ্রহণযোগ্য?

চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতা। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায়েই আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি না। বিষয়টিকে এভাবেও উল্লেখ করা যায় যে, ইন্দ্রিয়ানুভব ছাড়া জ্ঞানের অন্য কোনো পন্থা নেই। চরম অভিজ্ঞতাবাদের আদি বা মূল প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন। কিন্তু এরূপ মতবাদটির পূর্ণাঙ্গ ও সফল রূপ লক্ষ করা যায় জন স্টুয়ার্ট মিলের মতবাদে। সেকারণেই আমরা চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী বলতে মূলত জন স্টুয়ার্ট মিলকেই বুঝে থাকি। মৌল ভিত্তি হিসেবে অভিজ্ঞতাবাদ:  চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী জন স্টুয়ার্ট মিল বলেন যে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের মৌল ভিত্তিই হল ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতা। ফলে, ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে যা জ্ঞাত নয়, তা কখনোই জ্ঞানরূপে গণ্য হতে পারে না। তাঁর মতে, বাস্তবের ঘটনা সংক্রান্ত জ্ঞান যে ইন্দ্রিয় সংবেদনপ্রসূত, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে এগুলি বিচার্য বলে এগুলি সত্য বা মিথ্যা-যে-কোনো রূপেই গণ্য হতে পারে। তাঁর মতে, বাস্তব ঘটনা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও, গাণিতিক ও তার

মিলের চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বিষয়গুলি কী?

মিলের চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বিষয় চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মুখ্য পুরোধারূপে উল্লেখ করা যায় দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিলের নাম। মিল হলেন প্রকৃত অর্থেই একজন কঠোর অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। তিনি ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে দাবি করেন। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ভিন্ন আর অন্য কোনোভাবেই জ্ঞান লাভ করা যায় না। তিনি দাবি করেন যে, আমরা যে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জ্ঞানের কথা উল্লেখ করি, সেগুলি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতারই ভিন্ন ভিন্ন রূপমাত্র। মিলের চরম অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মূল বিষয়গুলিকে উল্লেখ করা হল- [1] জ্ঞানের উৎস হিসেবে ইন্দ্রিয়ানুভব: কঠোর অভিজ্ঞতাবাদী মিলের মতে, আমাদের জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল ইন্দ্রিয়ানুভব। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয়ানুভবের মাধ্যমেই আমরা সমস্তপ্রকার জ্ঞান লাভ করে থাকি। ইন্দ্রিয়ানুভব ছাড়া জ্ঞানের অন্য উৎসগুলি ভিত্তিহীন। জ্ঞানোৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধির ভূমিকাকে মিল পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। [2] জ্ঞানের আপতিক রূপ: মিল দাবি করেন যে, যেহেতু আমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ত পরিবর্তনশীল, সেহেতু অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানসমূহ কখনোই সুনিশ্চিত ও সার্বিকরূপে গণ্য হতে পারে না। সুতর

লকের অভিজ্ঞতাবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

লকের অভিজ্ঞতাবাদ প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী ব্রিটিশ দার্শনিক জন লকই হলেন প্রথম দার্শনিক যিনি অভিজ্ঞতাবাদের একটি সুস্পষ্ট ও সুসংহত রূপ তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের মৌল উপাদান। কারণ, অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আমরা জ্ঞান লাভ করি। তাঁর মতে, আমাদের অভিজ্ঞতা আসে দুটি পথ ধরে। এই দুটি পথের একটি হল সংবেদন (sensation) এবং অপরটি হল অন্তর্দর্শন (reflection)। সংবেদনের মাধ্যমে আমরা বাহ্য বস্তুর জ্ঞান লাভ করি, আর অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে লাভ করি আন্তর বিষয়ের জ্ঞান। জ্ঞানের উৎস: লকের মতে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের মৌল উৎস হল ধারণা (idea)। ধারণা দু-প্রকারㅡ[1] সরল ধারণা (simple idea) এবং [2] জটিল ধারণা (Complex idea)। জটিল ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই একাধিক সরল ধারণা। এই সরল ধারণাই হল জ্ঞানের মৌল উপাদান। সরল ধারণাগুলিকে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানতে পারি। তাঁর মতে, সরল ধারণাগুলিকেই আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। ধারণার পশ্চাতে যে বিষয় আছে সেগুলিকে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি না। সেগুলিকে অনুমান করে জানি বলে দাবি করি।  জ্ঞানের স্বরূপ: লক উল্লেখ করেন যে, জন্মাবার সময় থেকে আমাদের মন থ

লকের মতে ধারণা কয়প্রকার ও কী কী?

লকের মত অনুযায়ী ধারণার প্রকারভেদ দার্শনিক লক কখনোই বস্তু বা বিষয়ের সাক্ষাৎ জ্ঞান স্বীকার করেননি। তাঁর মতে, ধারণাই বস্তু বা বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা শুধু ধারণার মাধ্যমেই বস্তু বা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে থাকি। ধারণালান্ডের মাধ্যম:  লকের মতে, আমরা ধারণা লাভ করি দু- ভাবে-সংবেদন এবং অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে। সংবেদনের মাধ্যমে আমরা বাহ্য বস্তুর ধারণা লাভ করি। কিন্তু অন্তর্দর্শনের সাহায্যে লাভ করি আন্তর বিষয়ের ধারণা। লকের মতে ধারণা হল দু-প্রকার-সরল ধারণা এবং জটিল ধারণা। সরল ধারণা : সরল ধারণা হল সেই সমস্ত ধারণা যেগুলিকে মন সরাসরিভাবে সংবেদন অথবা অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করতে পারে। এই ধারণাগুলি হল সর্বাপেক্ষা সরল ও ক্ষুদ্রতম ধারণা। এগুলিকে আর বিশ্লেষণ করা যায় না। এই সমস্ত সরল ধারণাই হল জ্ঞানের মৌল উপাদান। লক তাই বলেন-ধারণাসমূহের মধ্যে মিল বা অমিল প্রত্যক্ষ করাই হল জ্ঞান। লকের মতে, সরল ধারণা চারপ্রকার- [1] একটিমাত্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত: এমন কতকগুলি সরল ধারণা পরিলক্ষিত হয় যেগুলি একটিমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। যথা-রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ ইত্যাদি। যেমন- আমরা রূপকে

সহজাত ধারণাকে লক কীভাবে খণ্ডন করেছেন?

লক কর্তৃক সহজাত ধারণা তত্ত্বের খণ্ডন প্রখ্যাত বুদ্ধিবাদী দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত তাঁর জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে সহজাত ধারণার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, আমাদের মনে এমন কতকগুলি ধারণা বিদ্যমান, যেগুলিকে সহজাত বা আন্তর ধারণা (innate idea) রূপে উল্লেখ করা হয়। তাঁর মতে, সহজাত ধারণাগুলি সমস্তপ্রকার সত্যজ্ঞানের ভিত্তিরূপে গণ্য। এগুলি স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও স্বতঃসিদ্ধরূপে স্বীকৃত। ঈশ্বরের ধারণা, নিত্যতার ধারণা, অসীমের ধারণা, পূর্ণতার ধারণা এবং কার্যকারণের ধারণা প্রভৃতি হল সহজাত ধারণা। এই সমস্ত ধারণা সত্যজ্ঞানের মৌল ভিত্তিরূপে গণ্য এবং সেকারণেই এগুলি জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও পড়ুন -  সহজাত ধারণা কী? সহজাত ধারণার বিরুদ্ধে লকের যুক্তি:  প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক এই সমস্ত সহজাত ধারণাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি দেকার্তের আন্তর ধারণার কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, আন্তর বা সহজাত ধারণা বলে কোনো কিছুই নেই। সহজাত ধারণার বিরুদ্ধে তাঁর যুক্তিগুলি হল: [1] অভিজ্ঞতা-পূর্ব সহজাত ধারণার অস্তিত্বহীনতা: দার্শনিক লক তাঁর জ্ঞানতত্ত্বে উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের সমস্তপ্রকার

সহজাত ধারণা কী?

সহজাত ধারণা বিখ্যাত বুদ্ধিবাদী ফরাসি দার্শনিক দেকার্ত যে তিনপ্রকার ধারণার কথা বলেছেন তার মধ্যে সহজাত ধারণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেকার্তের মতে, যা আগে থেকেই মানুষের মনের মধ্যে নিহিত থাকে তা-ই হল সহজাত ধারণা। এগুলি খুবই স্পষ্ট ও স্বতঃসিদ্ধ। জন্মের সময় থেকেই আমাদের মনে এই সহজাত ধারণাগুলি বর্তমান থাকে। এগুলি হল-নিত্যতা, পূর্ণতা, অসীমতা ইত্যাদি। সহজাত ধারণার অস্তিত্ব প্রমাণে বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বেশ কয়েকটি যুক্তি দেখিয়েছেন। যেমন-সহজাত ধারণা পূর্ব থেকেই আমাদের মনের মধ্যে থাকায় এগুলিকে আমরা বহু চেষ্টা করেও অভিজ্ঞতা বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণের দ্বারা অর্জন করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় অসীমতার ধারণা কখনোই অভিজ্ঞতার দ্বারা অর্জিত বা গঠিত হয় না, এগুলি বুদ্ধির মাধ্যমেই অনভূত হয়। আবার কতগুলি ধারণা আছে যেগুলি ছাড়া জ্ঞানকে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেমন-দেশ-কালের ধারণা বা কার্যকারণ সম্পর্কের ধারণা ইত্যাদি। এই সবই হল সহজাত ধারণা, অভিজ্ঞতালব্ধ নয়। বুদ্ধিবাদীদের মতে, এমন কিছু জ্ঞান আছে যেগুলিকে কোনো ক্ষেত্রেই সন্দেহ করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, 'দুই ও দুইয়ের যোগফল হল চার'-এই জ্ঞান সবসময়

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বার্কলের অভিমত কী?

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বার্কলের অভিমত প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। স্বাভাবিকভাবেই তিনি অভিজ্ঞতা তথা ইন্দ্রিয় সংবেদনকে জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান নিঃসৃত হয় অভিজ্ঞতার হাত ধরে। অভিজ্ঞতাকেই তিনি জ্ঞানের মূল মাপকাঠিরূপে স্বীকার করেন। জন লকের পরই অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরূপে প্রসিদ্ধ হলেন জর্জ বার্কলে। অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর তত্ত্ব:  অভিজ্ঞতাকে জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে স্বীকার করে বার্কলে যে বিখ্যাত তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা করেন, তা হল-অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর (Esse-est-Percipi)। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের ওপর। তাঁর মতে, জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের মাধ্যমে যা পাওয়া যায়, একমাত্র সেই বিষয়ই সত্য এবং তারই অস্তিত্ব আছে। আর যা জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের বাইরে, তার কোনো প্রকৃত সত্তা বা বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এভাবেই অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর তত্ত্বের মাধ্যমে বার্কলে একজন খাঁটি অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরূপে গণ্য হন। অবশ্য এরূপ তত্ত্বের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যাই হোক