728×90 ads

চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য কী? এরূপ মতবাদটি কি গ্রহণযোগ্য?

চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য


চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতা। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায়েই আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি না। বিষয়টিকে এভাবেও উল্লেখ করা যায় যে, ইন্দ্রিয়ানুভব ছাড়া জ্ঞানের অন্য কোনো পন্থা নেই। চরম অভিজ্ঞতাবাদের আদি বা মূল প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন। কিন্তু এরূপ মতবাদটির পূর্ণাঙ্গ ও সফল রূপ লক্ষ করা যায় জন স্টুয়ার্ট মিলের মতবাদে। সেকারণেই আমরা চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী বলতে মূলত জন স্টুয়ার্ট মিলকেই বুঝে থাকি।

মৌল ভিত্তি হিসেবে অভিজ্ঞতাবাদ: 


চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদী জন স্টুয়ার্ট মিল বলেন যে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞানের মৌল ভিত্তিই হল ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতা। ফলে, ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে যা জ্ঞাত নয়, তা কখনোই জ্ঞানরূপে গণ্য হতে পারে না। তাঁর মতে, বাস্তবের ঘটনা সংক্রান্ত জ্ঞান যে ইন্দ্রিয় সংবেদনপ্রসূত, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে এগুলি বিচার্য বলে এগুলি সত্য বা মিথ্যা-যে-কোনো রূপেই গণ্য হতে পারে। তাঁর মতে, বাস্তব ঘটনা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও, গাণিতিক ও তার্কিক জ্ঞানসমূহও ইন্দ্রিয় সংবেদন থেকেই লভ্য। ফলে, এগুলিও আবশ্যিক ও সার্বিকরূপে গ্রাহ্য না হয়ে আপতিক তথা সম্ভাব্যরূপেই গণ্য।

আরোহাত্মক পদ্ধতির স্বীকৃতি: 


চরমপন্থী অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী আমাদের জ্ঞানলাভের পদ্ধতি হল আরোহাত্মক পদ্ধতি (inductive method), কখনোই অবরোহাত্মক পদ্ধতি (deductive method) নয়। এরুপ মতবাদে অবরোহ পদ্ধতির বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশেষ থেকে সামান্যে যাওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় আরোহাত্মক প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি।

চরমপন্থী মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা


এরূপ মতবাদকে সর্বতোভাবে গ্রহণ করা যায় না। কারণ, এরূপ মতবাদ জ্ঞানকে শুধু ইন্দ্রিয় সংবেদনলব্ধ অভিজ্ঞতায় আবদ্ধ রাখে এবং জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রটিকে সংকুচিত করে। কিন্তু জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রটি হল অত্যন্ত ব্যাপক। এখানে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ছাড়াও, বুদ্ধির যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা একেবারেই অস্বীকার করা যায় না। এ কথা ঠিক যে, শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আমরা সমস্তপ্রকার জ্ঞান পেতে পারি না। এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন-ঈশ্বর, আত্মা, অধিবিদ্যা প্রভৃতির জ্ঞান কখনোই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাওয়া যায় না। এ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞানলাভের জন্য প্রয়োজন হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার। সুতরাং, অভিজ্ঞতা জ্ঞানের একটি উৎসরূপে গণ্য হলেও, কখনোই একমাত্র উৎস নয়। সে কারণেই এরূপ মতবাদটি একদেশদর্শিতার দোষে দুষ্ট বলে কখনোই সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

Post a Comment

0 Comments