পোস্টগুলি

ইতিহাস 9 - 8 নম্বর প্রশ্ন লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

নবম শ্রেণীর ইতিহাস আট নম্বরি সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর ৷

নমস্কার আমি দীপ আজকের এই blog পোস্টে আমারা  ( wbbse ) অনুযায়ী নবম শ্রেণীর সমস্ত ৮ নম্বরি প্রশ্ন দেওয়া হলো  ৷ 

ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণগুলি আলোচনা করো।

ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯ খ্রি.) আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক কোবান ফরাসি বিপ্লবকে অসংখ্য ছোটো-বড়ো খরস্রোতা নদীর সমন্বয়ে ছড়িয়ে-পড়া ভয়ানক বন্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ ফরাসি বিপ্লবের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ছিল। যেমন- [1]সরকারি অপব্যয়: ফরাসি রাজপরিবার অকাতরে অর্থব্যয় করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দেন। চতুর্দশ লুই (১৬৪৩- ১৭১৫ খ্রি.), পঞ্চদশ লুই (১৭১৫-৭৪ খ্রি.) ও ষোড়শ লুই-এর (১৭৭৪-৯৩ খ্রি.) আমলে সম্রাট-সহ রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতা ও বিলাসিতা চরমে পৌঁছোয়। ফলে ফরাসি রাজকোশ শূন্য হয়ে যায়। [2] ব্যয়বহুল যুদ্ধ: চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই বিভিন্ন ব্যয়বহুল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিপুল অর্থব্যয় করেন। ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। ফলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। [3 ] অধিকারভোগীদের আয়: ফ্রান্সের প্রায় অর্ধেক কৃষিজমিই ছিল যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের হাতে। জমি থেকে বিপুল আয় সত্ত্বেও তারা সরকারকে টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর, ভিটিংয়েমে বা আয়কর প্রভৃতি কর দিত না। তা সত্ত্বেও তারা রাষ্ট্

প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করগুলি কী ছিল?

প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ করগুলি ছিল-টাইলে, ভিংটিয়েমে, ক্যাপিটেশন, করভি বা বেগার শ্রম, প্রভৃতি। পরোক্ষ করগুলি ছিল-টাইদ বা ধর্ম কর, গ্যাবেল বা লবণ কর, তামাক কর, এইডি, ট্রেইট, স্ট্যাম্প কর, পণ্য শুল্ক, আবগারি শুল্ক, পরিবহণ শুল্ক (অকটুই) প্রভৃতি। প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে ভ্রান্ত অর্থনীতির ফলে ফরাসি রাজকোশে তীব্র সংকট [1] বৈদেশিক যুদ্ধ: ফ্রান্সের বুরবোঁ বংশের রাজাদের একের পর এক বৈদেশিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। চতুর্দশ লুই একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে আগেই অর্থসংকট সৃষ্টি করে যান। এরপর পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুইও বৈদেশিক যুদ্ধে জড়িয়ে রাজকোশের প্রভৃত অর্থ ব্যয় করে ফেলেন।  [2] ঋণ গ্রহণ: ব্যয় সংকোচের চেষ্টা না করে বুরবোঁ রাজারা বাজার থেকে ঋণ নিয়ে অর্থসংকট দূর করার উদ্যোগ নেন। এই ঋণের সুদ হিসেবে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ চলে যেতে থাকে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় অর্ধাংশই চলে যায় সুদ বাবদ। [3] রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতা: রাজপরিবারের সীমাহীন বিলাসিতা,অমিতব্যয়িতা, ভার্সাই রাজপ্রাসাদের বিপুল সংখ্যক কর্মচারী ও রানিদের অসংখ্য ব্যক্তিগত চাকরের ব্যয় বহন প্রভৃতির ফলে অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ফরাসি রাজকোশ প্রায় শূন্য

ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে রাজতন্ত্র কতটা দায়ী ছিল?

অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বুরবোঁ বংশের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী এই রাজতন্ত্রে রাজা ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক, আইন প্রণয়নকারী এবং প্রধান বিচারক। শাসনব্যবস্থায় জনগণের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না। ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ : রাজতন্ত্রের দায়িত্ব ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে রাজতন্ত্রের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি ও রাজতন্ত্রের দায়িত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। [1] রাজাদের দুর্বলতা: ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই (১৬৪৩-১৭১৫ খ্রি.) ছিলেন চরম স্বৈরাচারী। তিনি বলতেন "আমিই রাষ্ট্র"। অলস ও বিলাসী রাজা পঞ্চদশ লুই (১৭১৫-৭৪ খ্রি.) তাঁর উপপত্নী মাদাম দ্য পম্পাদুর- এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শাসন পরিচালনা করলে প্রশাসন দুর্নীতি ও  স্বজনপোষণে ছেয়ে যায়। এরপর অযোগ্য রাজা ষোড়শ লুই (১৭৭৪- ৯৩ খ্রি.) রাজতন্ত্রকে অবক্ষয়ের শেষ সীমায় নিয়ে যান। [2] অভিজাতদের আধিপত্য: প্রশাসনে অভিজাত সম্প্রদায়ের আধিপত্য শাসনব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। প্রশাসন প্রচণ্ড দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ইনটেনডেন্ট' নামে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীরা খুবই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। অভিজ

ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো।

ছবি
ঐতিহাসিক টেইন, রুস্তান, সেতোব্রিয়াঁ, মাদেলা, জোরেস, মাতিয়ে প্রমুখ মনে করেন যে, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের পশ্চাতে দার্শনিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফরাসি দার্শনিকগণ তাঁদের লেখনীর দ্বারা রাষ্ট্রব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলি দেশের সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেন। ফলে ফ্রান্সের শোষিত ও অবহেলিত মানুষের মনে বিপ্লবের বীজ রোপিত হয়। ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো। ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকা/অবদান ফ্রান্সের জনগণের মনে বিপ্লবের বীজ রোপণে মন্তেস্কু, ভলতেয়ার, রুশো, ডেনিস দিদেরা, ডি' এলেমবার্ট প্রমুখ দার্শনিক এবং ফিজিওক্র্যাট নামে দার্শনিক গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। [1] মন্তেস্কু: ফরাসি দার্শনিক মন্তেস্ক (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.) ছিলেন দেশের বঞ্চিত শ্রেণির প্রাণপুরুষ। মন্তেস্ক তাঁর 'দ্য স্পিরিট অব লজ'বা 'আইনের মর্ম' নামক গ্রন্থে সম্রাটের স্বৈরাচারী শাসন ও স্বর্গীয় অধিকারতত্ত্বের তীব্র সমালোচনা করেন। 'দ্য পার্সিয়ান লেটার্স' বা 'পার্সিয়ার পত্রাবলি' নামে অপর একটি গ্রন্থে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক মন্তেস্কু ফ্রান্সের পুরাতনতন্ত্র,

ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের সমাজকাঠামো কেমন ছিল?

বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজ ছিল মধ্যযুগীয় ও সামন্ততান্ত্রিক। ফ্রান্সের এই সমাজব্যবস্থাকে দার্শনিক ভলতেয়ার 'রাজনৈতিক কারাগার' বলে অভিহিতে করেছেন। সমাজে বৈষম্য প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল। বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের সামাজিক শ্রেণি ও বৈষম্য এই সময় ফরাসি সমাজ মূলত তিনটি সম্প্রদায় বা শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা- [1] যাজক সম্প্রদায় বা প্রথম শ্রেণি, [2] অভিজাত সম্প্রদায় বা দ্বিতীয় শ্রেণি এবং [3] বুর্জোয়া ও কৃষক সম্প্রদায় বা তৃতীয় শ্রেণি। এই তিনটি শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল 'বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত' শ্রেণি এবং তৃতীয় শ্রেণি ছিল অধিকারহীন শ্রেণি। [1] যাজক সম্প্রদায় বা প্রথম শ্রেণি: ফরাসি সমাজব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণি ছিল যাজক সম্প্রদায়। [i] সংখ্যা: বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে যাজকদের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার অর্থাৎ, ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ০.৫ শতাংশ। [ii] জমি থেকে আয়: যাজকদের সংখ্যা অতি সামান্য হলেও ফ্রান্সের সমগ্র কৃষিজমির ১/৫ অংশই ছিল যাজকদের গির্জার অধীনে। এই জমির জন্য যাজকরা কোনো নিয়মিত কর দিত না। 'কনট্রাক্ট অব পোইসি' নামে এক চুক্তি অনুসারে তারা রাজাকে স্বেচ্ছাকর দিত। গির্জার বিপ

ফরাসি বিপ্লবের জন্য দার্শনিকদের ভূমিকার মূল্যায়ন করো।

একদল ঐতিহাসিক মনে করেন যে, বিপ্লবের আগে মন্তেস্কু, ভলতেয়ার, রুশো, ডেনিস দিদেরো, ডি' এলেমবার্ট-সহ বিভিন্ন দার্শনিক তাঁদের রচনার মাধ্যমে ফ্রান্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি সাধারণ মানুষের চোখ খুলে দেওয়ায় ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটেছিল। আবার অন্য একদল ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লব সংঘটনের পিছনে দার্শনিকদের ভূমিকাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি। দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে যুক্তি ঐতিহাসিক টেইন, রুস্তান, রাইকার, সেতোব্রিয়াঁ, মাদেলা, জোরেস, মাতিয়ে, লাব্রজ, মর্নে প্রমুখ মনে করেন যে, ফরাসি বিপ্লব ঘটার পিছনে দার্শনিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই ঐতিহাসিকদের যুক্তিগুলি হল- [1] জনগণের সচেতনতা: কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলেই তার বিরুদ্ধে জনগণ বিপ্লব শুরু করে না। এই ত্রুটিবিচ্যুতিগুলির বিরুদ্ধে জনগণ সচেতন হলেই তার বিরুদ্ধে বিপ্লব হতে পারে। ফ্রান্সের দার্শনিকগণ জনগণকে সচেতন করার কাজটি করেছিলেন। [2] দার্শনিকদের জনপ্রিয়তা: অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বিভিন্ন দার্শনিকের মতবাদ খুবই জনপ্রিয় ছিল। প্যারিসের চায়ের দোকান ও ক্লাবগুলিতেও দার্শনিকদের মতামত আলোচিত হত। এসব স্থান থেকে তাঁদের মতামত সারা

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলির মূল্যায়ন করো।

ফরাসি জাতীয় সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই 'সংবিধান সভা'-য় রূপান্তরিত হয়। এই সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ছিলেন বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি। সংবিধান সভার (১৭৮১ খ্রি.) কার্যাবলি নতুন সংবিধান রচনা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে ফরাসি সংবিধান সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে- [1] সামন্ততন্ত্রের বিলোপ : ফরাসি জাতীয় সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার দ্বারা- [i] সামন্তপ্রথা, [ii] ভূমিদাস প্রথা, [iii] বিভিন্ন সামন্তকর, করভি বা বেগার খাটা, টাইদ বা ধর্মকর আদায়, [iv] সামন্তশ্রেণির বিশেষ অধিকার প্রভৃতি বিলুপ্ত হয়। [2] ' ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র ': সংবিধান সভার অপর উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট 'ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র' ঘোষণা। এই ঘোষণায় বলা হয়- [i] স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। [ii] আইনের চোখে প্রতিটি মানুষ সমান। [iii] জনগণ হল প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। [iv] বিনা বিচারে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। [v] ব্যক্তিস্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় ও ভোগের অধিকার, বাস্বাধীনতা, ধর্মী

ফ্রান্সে, সন্ত্রাসের শাসন পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ফ্রান্সের বিপ্লবী প্রজাতান্ত্রিক সরকার রাজা ষোড়শ লুই-এর প্রাণদণ্ড (২১ জানুয়ারি, ১৭৯৩ খ্রি.) দিলে রাজতন্ত্রের সমর্থকরা শীঘ্রই প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবিপ্লব শুরু করে। বিভিন্ন বিদেশি শক্তিও ফ্রান্সকে আক্রমণের উদ্যোগ নেয়। এই পরিস্থিতিতে জ্যাকোবিন দল ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চালু করে। ফ্রান্সের সন্ত্রাসের শাসন পরিচালনা  [1] সন্ত্রাসের সংগঠন : সন্ত্রাসের শাসনের সংগঠনেー[i] জননিরাপত্তা সমিতি, [ii] সাধারণ নিরাপত্তা সমিতি, [iii] সন্দেহের আইন, [iv] বিপ্লবী বিচারালয় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। জননিরাপত্তা সমিতি সন্ত্রাস পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করত, সাধারণ নিরাপত্তা সমিতি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করত, সন্দেহের আইনের দ্বারা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হত, বিপ্লবী বিচারালয়ে তাদের বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত এবং বিপ্লবের বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে গিলোটিনে তাদের হত্যা করা হত। [2] জ্যাকোবিন ও জিরন্ডিস্টদের বিরোধ : সন্ত্রাসের প্রথম পর্বে জ্যাকোবিন ও জিরন্ডিস্ট দল যৌথভাবে সন্ত্রাসের শাসন পরিচালনা করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই উভয় দলের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় এবং সন্ত্রাসের দ্বারা জ

নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন?

ছবি
আধুনিক ইউরোপ তথা বিশ্বের ইতিহাসে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়ক যিনি এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ প্রতিভার গুণে ফ্রান্সের চূড়ান্ত শাসনক্ষমতা দখল করেন। ঐতিহাসিক ফিলিপ গুয়েদালা বলেছেন যে, "নেপোলিয়নের উত্থানের ফলে ফ্রান্সের ইতিহাস হয় ইউরোপের ইতিহাস এবং নেপোলিয়নের ইতিহাস হয় ফ্রান্সের ইতিহাস"। আরও পড়ুন:-  ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো। নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন? নেপোলিয়নের উত্থান ও ক্ষমতালাভ [1] উত্থান: ফরাসি বিপ্লবের ঘটনা নেপোলিয়নের উত্থানের ভিত গড়ে দেয়। এই বিপ্লবই তাঁকে জীবন পথের সন্ধান দেয়। তিনি বিপ্লবপন্থী জ্যাকোবিন দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেকে ইতিহাসের পাদপ্রদীপের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবের পর নেপোলিয়ন মাত্র ১৭ বছর বয়সে ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। আরও পড়ুন:-  নেপোলিয়নের বিভিন্ন সংস্কারগুলি উল্লেখ করো। [2] অভ্যন্তরীণ সাফল্য: লেফটেন্যান্ট পদে বসে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পান। এই সময়- [i] ইংরেজ বাহিনীর অবরোধ থেকে ফ্রান্সের তুলো বন্দর মুক্ত (১৭৯৩ খ্রি.) করে স

সন্ত্রাসের শাসনের গুরুত্ব কী ছিল? সন্ত্রাসের রাজত্বকে কি সমর্থন করা যায়?

ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন ও রাজার মৃত্যুদণ্ডের পর দেশে এক সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের বিপ্লবী নেতারা দেশে এক আপৎকালীন জরুরি শাসন চালু করে যা সন্ত্রাসের রাজত্ব নামে পরিচিত। সন্ত্রাসের শাসনের ফলাফল ফ্রান্সে দীর্ঘ ১৩ মাস ব্যাপী (জুন, ১৭৯৩- জুলাই, ১৭৯৪ খ্রি.) সন্ত্রাসের শাসনের ফলাফলগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন- [1] বিপ্লব রক্ষা : সন্ত্রাসের শাসনের দ্বারা ফ্রান্সের প্রতিবিপ্লব অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, অরাজকতা প্রভৃতি বন্ধ হয়। বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকেও বিপ্লবী ফ্রান্স রক্ষা পায়।) [2] হত্যালীলা: প্রতিবিপ্লব দমন করে ফ্রান্সকে রক্ষা করতে গিয়ে নির্বিচারে বহু নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গিলোটিনে প্রাণ হারান এবং ৩ লক্ষ মানুষ বন্দি হন। লয়ার নদীতে ডুবিয়ে অনেককে হত্যা করা হয়। বহু মানুষ চিরদিনের মতো নিখোঁজ হয়ে যান। রানি মারি আঁতোয়ানেত, মাদাম রোঁলা, ব্রিসো, বারনাভ, বেইলি, দাঁতোঁ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিরও মৃত্যুদণ্ড হয় [3] প্রগতিশীল সংস্কার: সন্ত্রাসের শাসনকালে ফ্রান্সে বহু প্রগতিশীল সংস্কার চালু হয়। য

ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) বৃহত্তর প্রভাব কী ছিল?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সে প্রচলিত পুরাতনতন্ত্র ধ্বংস করে আধুনিক চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন এক নতুন যুগের সূচনা করে। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ফরাসি বিপ্লবই আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। যথা- [1] সামন্ততন্ত্রের অবসান: বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে। যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকার, সামাজিক বৈষম্য প্রভৃতি বিলুপ্ত হয়। সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক কর বাতিল করা হয়। ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনের চোখে সাম্য, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। [ 2] প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে (২৬ আগস্ট) 'ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার' ঘোষণার দ্বারা রাজতন্ত্রের বহু অধিকার খর্ব করা হয়, ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। [ 3] গির্জার আধিপত্য ধ্বংস: ফরাসি বিপ্লবের ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জাব্যবস্থা ও যা

ফ্রান্সের নতুন আইনসভার (১৭৯১-৯২ খ্রি.) পরিচয় দাও।

ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের তৃতীয় প্রতিনিধিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন তাদের সভাকে জাতীয় সভা বলে ঘোষণা করে। ফ্রান্সের নতুন আইনসভা [1] নতুন সংবিধান আইনসভা: ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন 'টেনিস কোর্টের শপথ' গ্রহণের পর থেকে ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে। ফ্রান্সের নতুন সংবিধান অনুসারে 'সক্রিয়' নাগরিকদের ভোটে ফ্রান্সের নতুন আইনসভা গঠিত হয়। এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৪৫ জন। [2] আইনসভার সমস্যা: ফ্রান্সের নতুন আইনসভা প্রথম থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। যথা- [i] সংবিধান সভার কোনো সদস্যকে নতুন আইনসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। ফলে আইনসভায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়। [ii] আইনসভার নতুন সদস্যদের সঙ্গে রাজার বিরোধ দেখা দেয়। [iii] দেশের মানুষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল। কিন্তু আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনাগ্রহী ছিল। [3] বিভিন্ন দল: ৭৪৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় প্রধান দল ছিল চারটি। যথা- [i] দক্ষিণপন্থী দল: নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এই দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ২৬৪ জন। [ii] জ্যাকোবিন দল: উগ্

নেপোলিয়নের বিভিন্ন সংস্কারগুলি উল্লেখ করো।

ফরাসি শাসক নেপোলিয়ন শুধু সমরকুশলী যোদ্ধা হিসেবেই নয়, সুদক্ষ সংস্কারক হিসেবেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ফিশার বলেছেন যে, "নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য ক্ষণস্থায়ী হলেও ফ্রান্সে তাঁর অসামরিক সংস্কারগুলি গ্রানাইট পাথরের শক্ত ভিতের ওপর নির্মিত হয়েছিল।” নেপোলিয়নের সংস্কার নেপোলিয়নের প্রধান সংস্কারগুলি হল- [1] শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : নেপোলিয়ন ফ্রান্সে আইনের শাসন প্রবর্তন করেন এবং জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দেন। সমগ্র দেশকে ৮৩টি ডিপার্টমেন্ট বা প্রদেশে বিভক্ত করে সেখানে 'প্রিফেক্ট' নামে শাসক নিয়োগ করেন। তিনি প্রদেশগুলিকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করে সেখানে 'সাব-প্রিফেক্ট' নামে শাসক নিয়োগ করেন। [2] অর্থনৈতিক সংস্কার : দেশের অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনিー[i] সরকারি ব্যয় হ্রাস ও অডিট প্রথা চালু করেন, [ii] সবাইকে আয়কর প্রদানে বাধ্য করেন, [iii] নতুন কর না চাপিয়ে পুরোনো কর আদায়ে জোর দেন, [iv] 'ব্যাংক অব ফ্রান্স' প্রতিষ্ঠা (১৮০০ খ্রি.) করেন ও [v] বাণিজ্যের উন্নতির জন্য বণিক সংঘের পুনর্গঠন করেন। [3] শিক্ষা সংস্কার : নেপোলিয়ন-[i] ফ্

নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের কোন্ কোন্ ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করেন?

ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আদর্শ ছিল 'সাম্য', 'মৈত্রী' ও 'স্বাধীনতা'। নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করেন এবং ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। বৈপ্লবিক ভাবধারা প্রতিষ্ঠা নেপোলিয়ন তাঁর রাজত্বকালে বিপ্লবের সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। যেমন- [1] দৈব অধিকারতত্বের বিলোপ: বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজারা নিজেদের ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করতেন। নেপোলিয়ন ক্ষমতালাভের পর ফরাসি রাজতন্ত্রের ঐশ্বরিক বা দৈব অধিকারতত্ত্বের বিলোপ ঘটান। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করে গণ-সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। [2] সাম্য প্রতিষ্ঠা: বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে বৈষম্যমূলক শ্রেণিবিভক্ত সমাজব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। নেপোলিয়ন ফ্রান্সে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর হন। নেপোলিয়ন তাঁর আইনসংহিতা অর্থাৎ কোড নেপোলিয়নের দ্বারা সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটান এবং ঘোষণা করেন যে, আইনের দৃষ্টিতে দেশের সকল নাগরিক সমান।  [3] সামন্ততান্ত্রিক আদর্শের বিলোপ: বিপ্লবের আগে বুরবোঁ রাজতন্ত্র ফ্রান্সে যেসব সামন্ততান্ত্রিক রীতিনীতি ও কর

টীকা লেখো: ট্রাফালগারের যুদ্ধ।

অ্যামিয়েন্সের সন্ধির (১৮০২ খ্রি.) পর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং উভয়পক্ষের মধ্যে ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধ (১৮০৫ খ্রি.) সংঘটিত হয়।  ট্রাফালগারের যুদ্ধের কারণ ট্রাফালগারের যুদ্ধের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন- [1] অ্যামিয়েন্সের সন্ধি: অ্যামিয়েন্সের সন্ধি-এর (১৮০২ খ্রি.) শর্তে মাল্টা দ্বীপ ইংল্যান্ডের ছাড়ার কথা থাকলেও পরে ইংল্যান্ড তা ছাড়তে অস্বীকার করে। [2] নজরদারি: ইংল্যান্ড মাল্টা দ্বীপ না ছাড়ায় নেপোলিয়নও জার্মানিতে ব্রিটিশ-রাজ্যের সম্পত্তির ওপর সেনার নজরদারি শুরু করে। [3] ফরাসি জাহাজ আক্রমণ: ইংল্যান্ডের নৌবাহিনী বারবার ফরাসি বাণিজ্য-জাহাজগুলি আক্রমণ করতে থাকে। এর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ভ্রমণকারী ১০০০ ইংরেজকে বন্দি করেন। [4] অপপ্রচার: ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রগুলিতে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালানো হয়। ফলে নেপোলিয়ন ক্রুদ্ধ হন এবং উভয় শক্তির মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। [5] ফ্রান্সের নৌশক্তি বৃদ্ধি: সামুদ্রিক বাণিজ্য ও নৌযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্স নৌশক্তি বৃদ্ধিতে তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে ইংল্যান্ড আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ট্রাফালগারে

নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।

ছবি
১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নেপোলিয়ন ছিলেন ইউরোপের ভাগ্যনিয়ন্তা। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে একসময় তাঁরও পতন ঘটে। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরের পর থেকেই নেপোলিয়নের পতন ক্রমশ ঘনিয়ে আসে। নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো নেপোলিয়নের পতনের কারণ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলির কাছে ওয়াটারলু-এর যুদ্ধে তাঁর চূড়ান্ত পরাজয় ও পতন ঘটে। তাঁর পতনের বিভিন্ন কারণ ছিল- [1] সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা: নেপোলিয়নের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল সীমাহীন। তিনি নিজেকে অপরাজেয় বলে মনে করতেন এবং তাঁর সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা সম্পর্কে সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। তার ফলে তিনি ইউরোপের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধ হয়ে একই সঙ্গে বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। [2] সাম্রাজ্যের দুর্বল ভিত্তি: নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল দুর্বল। সামরিক শক্তির জোরে প্রতিষ্ঠিত এই সাম্রাজ্যের প্রতি জনগণের আন্তরিক সমর্থন ছিল না। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে যেসব জাতিকে ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত করেন সেসব জাতি নেপোলিয়ন ও ফরাসি শাসনকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। [3] স্বৈরতন্ত্র: নেপোলিয়ন ইউরোপের জনগণকে ব

নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের কোন্ কোন্ ভাবধারা ধ্বংস করেন?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সের পচনশীল পুরাতনতন্ত্র ধ্বংস হয়ে নতুন ও আধুনিক ভাবধারা ও আদর্শের বিকাশ ঘটে। ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আদর্শ ছিল 'সাম্য', 'মৈত্রী' ও 'স্বাধীনতা'। বৈপ্লবিক ভাবধারা ধবংস ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করে বিপ্লবের সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও তিনি স্বাধীনতার আদর্শ-সহ বিভিন্ন বৈপ্লবিক ভাবধারা ধ্বংস করেন। যেমন- [1] রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: বিপ্লবীরা ফ্রান্সের বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে 'সম্রাট' হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবে তিনি দেশে পুনরায় চূড়ান্ত স্বৈরাচারী বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে বিপ্লবের মূল লক্ষ্যটিই ব্যর্থ হয়ে যায়। [2] স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস: নেপোলিয়ন ফ্রান্সের মানুষের স্বাধীনতা। ধ্বংস করেন। তিনি-[i] প্রাদেশিক আইনসভাগুলির ক্ষমতা কেড়ে নেন। [ii] মানুষের বাস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। [iii] বিনা বিচারে যে-কোনো ব্যক্তিকে গ্

নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় অবরোধের কী ভূমিকা ছিল?

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ জারি করে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় অবরোধের ভূমিকা নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন যা তাঁর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। যেমন- [1] ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ক্ষতি: নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা পরোক্ষে ফ্রান্সের অর্থনীতিরই যথেষ্ট ক্ষতি করে। ইংল্যান্ডের 'অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল' নামে নৌ-প্রতিরোধের ফলে ফ্রান্সের সামুদ্রিক বাণিজ্য যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফ্রান্সে শ্রমিক ছাঁটাই, বেকার সমস্যা প্রভৃতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই ঐতিহাসিক জর্জ রুডে বলেছেন যে, "মহাদেশীয় ব্যবস্থা ফ্রান্সের পক্ষে 'বুমেরাং' হয়ে দাঁড়ায়।" [2] উপকূল দখল: নেপোলিয়ন জোর করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে ইউরোপের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার মাইল অঞ্চল দখল করে নেন। এ ছাড়া বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ তিনি দখল করে নিলে বিভিন্ন দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। [3] ব্যয়ভার: মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন যে বিস্তৃত

মেটারনিখ ব্যবস্থার মূল্যায়ন করো। মেটারনিখ ব্যবস্থার পতনের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ ইউরোপে উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি প্রগতিশীল ভাবধারার অগ্রগতি প্রতিহত করতে ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যে রক্ষণশীল ও দমনমূলক নীতি কার্যকর করেন তা সাধারণভাবে 'মেটারনিখ ব্যবস্থা' নামে পরিচিত। মেটারনিখ ব্যবস্থার মূল্যায়ন একদিকে মেটারনিখ ব্যবস্থার পক্ষে এবং অন্যদিকে এর বিপক্ষেও বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। যেমন- [1] সপক্ষে যুক্তি: মেটারনিখ ব্যবস্থার সপক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি হল- [i] ইউরোপের যুদ্ধজনিত অশান্তি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে মেটারনিখ অন্তত ৩০ বছরের জন্য শান্তি ও স্থিরতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। [ii] শান্তি প্রতিষ্ঠার ফলে ইউরোপে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। [iii] বহু জাতি ও ভাষাগোষ্ঠী অধ্যুষিত অস্ট্রিয়ার ঐক্য ধরে রাখার জন্য মেটারনিখের নীতির প্রয়োজন ছিল। [iv] মেটারনিখের রক্ষণশীল নীতির পেছনে অস্ট্রিয়ার সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফ এবং মন্ত্রী কাউন্ট কোলেভার্ট-এর যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। [ 2] বিপক্ষে যুক্তি: মেটারনিখ ব্যবস্থার বিপক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি হল- [i] মেটারনিখের নীতি ছিল নেতিবাচক, সংকীর্ণ ও সংস্কারবিরোধী। [u] ম