728×90 ads

ফ্রান্সের নতুন আইনসভার (১৭৯১-৯২ খ্রি.) পরিচয় দাও।

ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের তৃতীয় প্রতিনিধিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন তাদের সভাকে জাতীয় সভা বলে ঘোষণা করে।

ফ্রান্সের নতুন আইনসভা

[1] নতুন সংবিধান আইনসভা: ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন 'টেনিস কোর্টের শপথ' গ্রহণের পর থেকে ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে। ফ্রান্সের নতুন সংবিধান অনুসারে 'সক্রিয়' নাগরিকদের ভোটে ফ্রান্সের নতুন আইনসভা গঠিত হয়। এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৪৫ জন।

[2] আইনসভার সমস্যা: ফ্রান্সের নতুন আইনসভা প্রথম থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। যথা- [i] সংবিধান সভার কোনো সদস্যকে নতুন আইনসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। ফলে আইনসভায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়। [ii] আইনসভার নতুন সদস্যদের সঙ্গে রাজার বিরোধ দেখা দেয়। [iii] দেশের মানুষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল। কিন্তু আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনাগ্রহী ছিল।

[3] বিভিন্ন দল: ৭৪৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় প্রধান দল ছিল চারটি। যথা-
[i] দক্ষিণপন্থী দল: নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এই দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ২৬৪ জন।
[ii] জ্যাকোবিন দল: উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দল ছিল রাজতন্ত্রবিরোধী এবং প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। এই দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ১৩৬ জন।
[iii] জিরন্ডিস্ট দল ও [iv] মধ্যপন্থী দল: ব্রিসোর নেতৃত্বাধীন বামপন্থী জিরন্ডিস্ট ও নিরপেক্ষ মধ্যপন্থী দলের মোট সদস্যংখ্যা ছিল ৩৪৫ জন।

[4] রাজার সঙ্গে বিরোধ: নতুন আইনসভার প্রথম অধিবেশনে আইনসভার সঙ্গে শীঘ্রই রাজার বিরোধ শুরু হয়। এই সময় আইনসভা দুটি আইন পাশ করে-[i] যাজকদের নতুন করে 'ধর্মযাজকদের সংবিধান'-এর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে হবে। [ii] এমিগ্রি অর্থাৎ দেশত্যাগী অভিজাতরা দু-মাসের মধ্যে দেশে না ফিরলে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। রাজা আইন দুটিতে অনুমোদন না দিয়ে 'ভিটো' প্রয়োগ করে আইন দুটি স্থগিত রাখেন।

[ 5] যুদ্ধ সম্পর্কে ভিন্নমত: ফিউল্যান্টরা মনে করত যে, বৈদেশিক যুদ্ধে জয়ী হলে ফরাসি রাজার মর্যাদা বাড়বে। জিরন্ডিস্টরা মনে করত যে, যুদ্ধজয়ের ফলে বিপ্লবী ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ সংকট দূর করা সম্ভব হবে। এজন্য এই দুই দল বিদেশি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলেন। অন্যদিকে, জ্যাকোবিন দল মনে করত যে, যুদ্ধ বিপ্লবকে পিছিয়ে দেবে। এজন্য তারা যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন।

[6] রাজপ্রাসাদ আক্রমণ: ফিউল্যান্ট মন্ত্রীসভার পর জিরন্ডিস্ট মন্ত্রীসভা গঠিত (মার্চ, ১৭৯২ খ্রি.) হলে রাজা ষোড়শ লুই এই মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্যের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বরখাস্ত করেন (১৩ জুন, ১৭৯২ খ্রি.)। ফলে জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে উত্তেজিত জনতা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ (১০ আগস্ট, ১৭৯২ খ্রি.) করে।

মূল্যায়ন: জনতা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করলে রাজা ও রানি প্রাণভয়ে নিকটবর্তী আইনসভায় আশ্রয় নেয়। অবশেষে আইনসভা রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁকে টেম্পল দুর্গে বন্দি করে। ঐতিহাসিক লেফেভর এই ঘটনাকে 'দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব' বলে অভিহিত করেছেন। রাজার ক্ষমতাচ্যুতির ফলে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের সংবিধান বাতিল হয়ে যায়। এরপর সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত 'জাতীয় সভা' বা 'ন্যাশনাল কনভেনশন' দেশের নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

Post a Comment

0 Comments