পোস্টগুলি

ইতিহাস 9 লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন?

ছবি
আধুনিক ইউরোপ তথা বিশ্বের ইতিহাসে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়ক যিনি এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ প্রতিভার গুণে ফ্রান্সের চূড়ান্ত শাসনক্ষমতা দখল করেন। ঐতিহাসিক ফিলিপ গুয়েদালা বলেছেন যে, "নেপোলিয়নের উত্থানের ফলে ফ্রান্সের ইতিহাস হয় ইউরোপের ইতিহাস এবং নেপোলিয়নের ইতিহাস হয় ফ্রান্সের ইতিহাস"। আরও পড়ুন:-  ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো। নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন? নেপোলিয়নের উত্থান ও ক্ষমতালাভ [1] উত্থান: ফরাসি বিপ্লবের ঘটনা নেপোলিয়নের উত্থানের ভিত গড়ে দেয়। এই বিপ্লবই তাঁকে জীবন পথের সন্ধান দেয়। তিনি বিপ্লবপন্থী জ্যাকোবিন দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেকে ইতিহাসের পাদপ্রদীপের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবের পর নেপোলিয়ন মাত্র ১৭ বছর বয়সে ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। আরও পড়ুন:-  নেপোলিয়নের বিভিন্ন সংস্কারগুলি উল্লেখ করো। [2] অভ্যন্তরীণ সাফল্য: লেফটেন্যান্ট পদে বসে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পান। এই সময়- [i] ইংরেজ বাহিনীর অবরোধ থেকে ফ্রান্সের তুলো বন্দর মুক্ত (১৭৯৩ খ্রি.) করে স

ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) বৃহত্তর প্রভাব কী ছিল?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সে প্রচলিত পুরাতনতন্ত্র ধ্বংস করে আধুনিক চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন এক নতুন যুগের সূচনা করে। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ফরাসি বিপ্লবই আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। যথা- [1] সামন্ততন্ত্রের অবসান: বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে। যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকার, সামাজিক বৈষম্য প্রভৃতি বিলুপ্ত হয়। সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক কর বাতিল করা হয়। ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনের চোখে সাম্য, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। [ 2] প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে (২৬ আগস্ট) 'ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার' ঘোষণার দ্বারা রাজতন্ত্রের বহু অধিকার খর্ব করা হয়, ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। [ 3] গির্জার আধিপত্য ধ্বংস: ফরাসি বিপ্লবের ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জাব্যবস্থা ও যা

ফ্রান্সের নতুন আইনসভার (১৭৯১-৯২ খ্রি.) পরিচয় দাও।

ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের তৃতীয় প্রতিনিধিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন তাদের সভাকে জাতীয় সভা বলে ঘোষণা করে। ফ্রান্সের নতুন আইনসভা [1] নতুন সংবিধান আইনসভা: ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন 'টেনিস কোর্টের শপথ' গ্রহণের পর থেকে ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে। ফ্রান্সের নতুন সংবিধান অনুসারে 'সক্রিয়' নাগরিকদের ভোটে ফ্রান্সের নতুন আইনসভা গঠিত হয়। এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৪৫ জন। [2] আইনসভার সমস্যা: ফ্রান্সের নতুন আইনসভা প্রথম থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। যথা- [i] সংবিধান সভার কোনো সদস্যকে নতুন আইনসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। ফলে আইনসভায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়। [ii] আইনসভার নতুন সদস্যদের সঙ্গে রাজার বিরোধ দেখা দেয়। [iii] দেশের মানুষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল। কিন্তু আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনাগ্রহী ছিল। [3] বিভিন্ন দল: ৭৪৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় প্রধান দল ছিল চারটি। যথা- [i] দক্ষিণপন্থী দল: নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এই দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ২৬৪ জন। [ii] জ্যাকোবিন দল: উগ্

নেপোলিয়নের বিভিন্ন সংস্কারগুলি উল্লেখ করো।

ফরাসি শাসক নেপোলিয়ন শুধু সমরকুশলী যোদ্ধা হিসেবেই নয়, সুদক্ষ সংস্কারক হিসেবেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ফিশার বলেছেন যে, "নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য ক্ষণস্থায়ী হলেও ফ্রান্সে তাঁর অসামরিক সংস্কারগুলি গ্রানাইট পাথরের শক্ত ভিতের ওপর নির্মিত হয়েছিল।” নেপোলিয়নের সংস্কার নেপোলিয়নের প্রধান সংস্কারগুলি হল- [1] শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : নেপোলিয়ন ফ্রান্সে আইনের শাসন প্রবর্তন করেন এবং জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দেন। সমগ্র দেশকে ৮৩টি ডিপার্টমেন্ট বা প্রদেশে বিভক্ত করে সেখানে 'প্রিফেক্ট' নামে শাসক নিয়োগ করেন। তিনি প্রদেশগুলিকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করে সেখানে 'সাব-প্রিফেক্ট' নামে শাসক নিয়োগ করেন। [2] অর্থনৈতিক সংস্কার : দেশের অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনিー[i] সরকারি ব্যয় হ্রাস ও অডিট প্রথা চালু করেন, [ii] সবাইকে আয়কর প্রদানে বাধ্য করেন, [iii] নতুন কর না চাপিয়ে পুরোনো কর আদায়ে জোর দেন, [iv] 'ব্যাংক অব ফ্রান্স' প্রতিষ্ঠা (১৮০০ খ্রি.) করেন ও [v] বাণিজ্যের উন্নতির জন্য বণিক সংঘের পুনর্গঠন করেন। [3] শিক্ষা সংস্কার : নেপোলিয়ন-[i] ফ্

নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের কোন্ কোন্ ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করেন?

ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আদর্শ ছিল 'সাম্য', 'মৈত্রী' ও 'স্বাধীনতা'। নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করেন এবং ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। বৈপ্লবিক ভাবধারা প্রতিষ্ঠা নেপোলিয়ন তাঁর রাজত্বকালে বিপ্লবের সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। যেমন- [1] দৈব অধিকারতত্বের বিলোপ: বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজারা নিজেদের ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করতেন। নেপোলিয়ন ক্ষমতালাভের পর ফরাসি রাজতন্ত্রের ঐশ্বরিক বা দৈব অধিকারতত্ত্বের বিলোপ ঘটান। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করে গণ-সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। [2] সাম্য প্রতিষ্ঠা: বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে বৈষম্যমূলক শ্রেণিবিভক্ত সমাজব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। নেপোলিয়ন ফ্রান্সে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর হন। নেপোলিয়ন তাঁর আইনসংহিতা অর্থাৎ কোড নেপোলিয়নের দ্বারা সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটান এবং ঘোষণা করেন যে, আইনের দৃষ্টিতে দেশের সকল নাগরিক সমান।  [3] সামন্ততান্ত্রিক আদর্শের বিলোপ: বিপ্লবের আগে বুরবোঁ রাজতন্ত্র ফ্রান্সে যেসব সামন্ততান্ত্রিক রীতিনীতি ও কর

টীকা লেখো: ট্রাফালগারের যুদ্ধ।

অ্যামিয়েন্সের সন্ধির (১৮০২ খ্রি.) পর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং উভয়পক্ষের মধ্যে ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধ (১৮০৫ খ্রি.) সংঘটিত হয়।  ট্রাফালগারের যুদ্ধের কারণ ট্রাফালগারের যুদ্ধের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন- [1] অ্যামিয়েন্সের সন্ধি: অ্যামিয়েন্সের সন্ধি-এর (১৮০২ খ্রি.) শর্তে মাল্টা দ্বীপ ইংল্যান্ডের ছাড়ার কথা থাকলেও পরে ইংল্যান্ড তা ছাড়তে অস্বীকার করে। [2] নজরদারি: ইংল্যান্ড মাল্টা দ্বীপ না ছাড়ায় নেপোলিয়নও জার্মানিতে ব্রিটিশ-রাজ্যের সম্পত্তির ওপর সেনার নজরদারি শুরু করে। [3] ফরাসি জাহাজ আক্রমণ: ইংল্যান্ডের নৌবাহিনী বারবার ফরাসি বাণিজ্য-জাহাজগুলি আক্রমণ করতে থাকে। এর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ভ্রমণকারী ১০০০ ইংরেজকে বন্দি করেন। [4] অপপ্রচার: ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রগুলিতে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালানো হয়। ফলে নেপোলিয়ন ক্রুদ্ধ হন এবং উভয় শক্তির মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। [5] ফ্রান্সের নৌশক্তি বৃদ্ধি: সামুদ্রিক বাণিজ্য ও নৌযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্স নৌশক্তি বৃদ্ধিতে তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে ইংল্যান্ড আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ট্রাফালগারে

নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।

ছবি
১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নেপোলিয়ন ছিলেন ইউরোপের ভাগ্যনিয়ন্তা। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে একসময় তাঁরও পতন ঘটে। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরের পর থেকেই নেপোলিয়নের পতন ক্রমশ ঘনিয়ে আসে। নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো নেপোলিয়নের পতনের কারণ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলির কাছে ওয়াটারলু-এর যুদ্ধে তাঁর চূড়ান্ত পরাজয় ও পতন ঘটে। তাঁর পতনের বিভিন্ন কারণ ছিল- [1] সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা: নেপোলিয়নের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল সীমাহীন। তিনি নিজেকে অপরাজেয় বলে মনে করতেন এবং তাঁর সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা সম্পর্কে সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। তার ফলে তিনি ইউরোপের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধ হয়ে একই সঙ্গে বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। [2] সাম্রাজ্যের দুর্বল ভিত্তি: নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল দুর্বল। সামরিক শক্তির জোরে প্রতিষ্ঠিত এই সাম্রাজ্যের প্রতি জনগণের আন্তরিক সমর্থন ছিল না। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে যেসব জাতিকে ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত করেন সেসব জাতি নেপোলিয়ন ও ফরাসি শাসনকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। [3] স্বৈরতন্ত্র: নেপোলিয়ন ইউরোপের জনগণকে ব

নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের কোন্ কোন্ ভাবধারা ধ্বংস করেন?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সের পচনশীল পুরাতনতন্ত্র ধ্বংস হয়ে নতুন ও আধুনিক ভাবধারা ও আদর্শের বিকাশ ঘটে। ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আদর্শ ছিল 'সাম্য', 'মৈত্রী' ও 'স্বাধীনতা'। বৈপ্লবিক ভাবধারা ধবংস ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করে বিপ্লবের সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও তিনি স্বাধীনতার আদর্শ-সহ বিভিন্ন বৈপ্লবিক ভাবধারা ধ্বংস করেন। যেমন- [1] রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: বিপ্লবীরা ফ্রান্সের বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে 'সম্রাট' হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবে তিনি দেশে পুনরায় চূড়ান্ত স্বৈরাচারী বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে বিপ্লবের মূল লক্ষ্যটিই ব্যর্থ হয়ে যায়। [2] স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস: নেপোলিয়ন ফ্রান্সের মানুষের স্বাধীনতা। ধ্বংস করেন। তিনি-[i] প্রাদেশিক আইনসভাগুলির ক্ষমতা কেড়ে নেন। [ii] মানুষের বাস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। [iii] বিনা বিচারে যে-কোনো ব্যক্তিকে গ্

নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় অবরোধের কী ভূমিকা ছিল?

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ জারি করে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় অবরোধের ভূমিকা নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন যা তাঁর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। যেমন- [1] ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ক্ষতি: নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা পরোক্ষে ফ্রান্সের অর্থনীতিরই যথেষ্ট ক্ষতি করে। ইংল্যান্ডের 'অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল' নামে নৌ-প্রতিরোধের ফলে ফ্রান্সের সামুদ্রিক বাণিজ্য যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফ্রান্সে শ্রমিক ছাঁটাই, বেকার সমস্যা প্রভৃতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই ঐতিহাসিক জর্জ রুডে বলেছেন যে, "মহাদেশীয় ব্যবস্থা ফ্রান্সের পক্ষে 'বুমেরাং' হয়ে দাঁড়ায়।" [2] উপকূল দখল: নেপোলিয়ন জোর করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে ইউরোপের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার মাইল অঞ্চল দখল করে নেন। এ ছাড়া বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ তিনি দখল করে নিলে বিভিন্ন দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। [3] ব্যয়ভার: মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন যে বিস্তৃত

মেটারনিখ ব্যবস্থার মূল্যায়ন করো। মেটারনিখ ব্যবস্থার পতনের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ ইউরোপে উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি প্রগতিশীল ভাবধারার অগ্রগতি প্রতিহত করতে ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যে রক্ষণশীল ও দমনমূলক নীতি কার্যকর করেন তা সাধারণভাবে 'মেটারনিখ ব্যবস্থা' নামে পরিচিত। মেটারনিখ ব্যবস্থার মূল্যায়ন একদিকে মেটারনিখ ব্যবস্থার পক্ষে এবং অন্যদিকে এর বিপক্ষেও বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। যেমন- [1] সপক্ষে যুক্তি: মেটারনিখ ব্যবস্থার সপক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি হল- [i] ইউরোপের যুদ্ধজনিত অশান্তি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে মেটারনিখ অন্তত ৩০ বছরের জন্য শান্তি ও স্থিরতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। [ii] শান্তি প্রতিষ্ঠার ফলে ইউরোপে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। [iii] বহু জাতি ও ভাষাগোষ্ঠী অধ্যুষিত অস্ট্রিয়ার ঐক্য ধরে রাখার জন্য মেটারনিখের নীতির প্রয়োজন ছিল। [iv] মেটারনিখের রক্ষণশীল নীতির পেছনে অস্ট্রিয়ার সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফ এবং মন্ত্রী কাউন্ট কোলেভার্ট-এর যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। [ 2] বিপক্ষে যুক্তি: মেটারনিখ ব্যবস্থার বিপক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি হল- [i] মেটারনিখের নীতি ছিল নেতিবাচক, সংকীর্ণ ও সংস্কারবিরোধী। [u] ম

ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের পটভূমি ও প্রভাব আলোচনা করো।

ফরাসি সম্রাট অষ্টাদশ লুইয়ের মৃত্যুর (১৮২৪ খ্রি.) পর তাঁর ভাই সম্রাট দশম চার্লস (১৮২৪-৩০ খ্রি.) ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন।  জুলাই বিপ্লবের কারণ/পটভূমি তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল দশম চার্লসের বিরুদ্ধে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লব ঘটে। এই বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ ছিল- [1] মধ্যপন্থা নীতি বাতিল: পূর্ববর্তী সম্রাট অষ্টাদশ লুই-এর মধ্যপন্থা নীতি বাতিল করে দশম চার্লস ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও ক্যাথোলিক গির্জার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেন। বহু সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করা হয়। [2] ধর্মীয় উদ্যোগ: দশম চার্লস 'ধর্মবিরোধী আইন' (১৮২৭ খ্রি.) পাস করে- [1] শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর গির্জার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন। [ü] গির্জার বিরুদ্ধে সমালোচনার অধিকার কেড়ে নেন। [iii] জেসুইট নামক নির্বাসিত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেদের দেশে ফিরিয়ে এনে উচ্চ রাজপদে নিয়োগ করেন। [3] ক্ষতিপূরণ: বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের দেশত্যাগী অভিজাতদের জমি বাজেয়াপ্ত করে তা কৃষকদের বিতরণ করা হয়েছিল। দশম চার্লস 'অ্যাক্ট অব জাস্টিস' নামে এক আইন পাশ করে সেই বাজেয়াপ্ত জমির জন্য অভিজাতদের ক্ষতি

ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের (১৮৪৮ খ্রি.) কারণগুলি কী ছিল?

দশম চার্লসের রাজত্বকালে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র তিন দিনের রক্তপাতহীন জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সের অর্লিয়েন্স বংশের সূচনা হয় এবং এই বংশের রাজা লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র 'জুলাই রাজতন্ত্র' নামে পরিচিত। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে লুই ফিলিপ তথা জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে 'দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ বিভিন্ন ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেন। যেমন- [1] বুর্জোয়াদের আধিপত্য: লুই ফিলিপ একটি বুর্জোয়া পার্লামেন্টের দ্বারা রাজপদে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর আমলে দেশে বুর্জোয়াদেরই স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা হয়। ফলে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।  [2] জনসমর্থনের অভাব: বিভিন্ন কারণে লুই ফিলিপের জনসমর্থনের অভাব ছিল। যেমন-[i] নেপোলিয়নের অনুগামীরা তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র লুই বোনাপার্টকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল। [ii] ন্যায্য অধিকার নীতির সমর্থকরা দশম চার্লসের উত্তরাধিকারী ডিউক অব বেরিকে সিংহাসনের বৈধ দাবিদার বলে মনে করতেন। [iii] ক্যাথোলিকরা লুই ফিলিপের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির এবং প্রজ

ইটালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে ইটালি বিভিন্ন ছোটোবড়ো রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া ছাড়া ইটালির সব রাজ্যেই অস্ট্রিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইটালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাডুরের ভূমিকা বিদেশি শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে বহুধা বিভক্ত ইটালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁরা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি ক্যাভুর (১৮১০-১৮৬১ খ্রি.)। [1] মতাদর্শ: [i] বিদেশি সাহায্য গ্রহণ: বাস্তববাদী ক্যাভুর উপলব্ধি করেন যে, বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার মতো প্রবল শক্তিকে ইটালি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। [ii] স্যাভয় বংশের নেতৃত্ব: ক্যাভুর পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার স্যাভয় রাজবংশের অধীনে ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেন। [iii] পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধি: পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। [2] বিদেশি সাহায্য: [i] ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিকে সহায়তা: অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সাহায্য লাভের উদ্দেশ্যে ক্যাভুর ক্রিমিয়ার যুদ্ধে (১৮৫৫-১৮৫৬ খ্রি.) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সহায়তা করেন। [ii] প্যারিসের ব

উনিশ শতকে বলকান/পূর্বাঞ্চল/নিকট-প্রাচ্য সমস্যার উপাদানগুলি কী ছিল?

ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত ইজিয়ান সাগর ও ড্যানিয়ুব নদীর মধ্যবর্তী পার্বত্যভূমি বলকান অঞ্চল নামে পরিচিত। পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে গ্রিস, বালগেরিয়া, মলডেভিয়া, রোমেনিয়া, সার্বিয়া প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিগুলির ওপর এশিয়ার অটোমান তুর্কিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বলকান সমস্যার উপাদান বলকান সংকটের বিভিন্ন উপাদান ছিল। যেমন- [1] তুর্কি সাম্রাজ্যের দুর্বলতা: অষ্টাদশ শতকের শেষদিক থেকে- [i] ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আধুনিক সামরিক শক্তিতে সজ্জিত হয়ে উঠলেও তুরস্ক আধুনিক যুগের উপযুক্ত সামরিক শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি। [ii] তুরস্কের বিখ্যাত জানিজারি সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করলে সুলতান এই বাহিনী ভেঙে দেন। [iii] তুরস্ক মধ্যযুগীয় মোল্লাতন্ত্র ও ধর্মীয় গোঁড়ামিকে আঁকড়ে থাকায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে। [iv] শাসকদের অযোগ্যতা, প্রাদেশিক শাসকদের ক্ষমতার লোভ, শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রভৃতির ফলে তুর্কি শাসন প্রায় ভেঙে পড়ে। [2] রুশ আগ্রাসন: রুশ জার পিটার দ্য গ্রেট (১৭২১-১৭২৫খ্রি.) দুর্বল তুরস্কে আগ্রাসন চালিয়ে বরফমুক্ত কৃয়সাগরের উপকূল পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন। এটি 'উয়জল নীতি' নামে পরিচিতি। রুশ জারিনা দ্বিতীয় ক্যা

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণগুলি কী ছিল?

ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। মহাদেশীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে শিল্পায়ন শুরু হয় আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর পর। ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম/মহাদেশীয় ভূখন্ডে দেরিতে শিল্পায়ন ঘটার কারণ সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার বা মহাদেশীয় ভূখণ্ডে শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হওয়ার কারণগুলি ছিল- [1] অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ: ইংল্যান্ডেㅡ[i] কয়লা ও লোহার প্রাচুর্য, [ii] বস্ত্রশিল্পের অনুকূল স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, [iii] তীব্র বায়ু ও জলশক্তি শিল্পের বিকাশে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। এতকিছু প্রাকৃতিক সুবিধা একত্রে মহাদেশীয় ভূখণ্ডের দেশগুলিতে ছিল না। [2] কাঁচামাল সংগ্রহ: ইংল্যান্ড তার সুবিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে নিয়মিত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছিল। এমন সুবিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির না থাকায় তারা শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। [3] বাজার: ইংল্যান্ড নিজের দেশে বিক্রির পর তার উদ্বৃত্ত শিল্পপণ্য তার বিভিন্ন উপনিবেশের বাজারগুলিতে বিক্রির সুয

শিল্পবিপ্লবের ফলাফলগুলি উল্লেখ করো।

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে প্রথমে ইংল্যান্ডে এবং পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যন্ত্রচালিত কলকারখানায় শিল্পোৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনা শিল্পবিপ্লব নামে পরিচিত। শিল্পবিপ্লবের ফলাফল ইংল্যান্ড তথা ইউরোপীয় অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিল্পবিপ্লবের ব্যাপক ও গভীর ফলাফল লক্ষ করা যায়। যেমন-  [1] শিল্প-অর্থনীতির বিকাশ: শিল্পবিপ্লবের ফলে পুরোনো কৃষিনির্ভর অর্থনীতি দ্রুত শিল্প-বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। শিল্পোৎপাদনের ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। [2] ফ্যাক্টরি প্রথার উদ্ভব: শিল্পবিপ্লবের ফলে শহরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে বহু শিল্পকারখানা গড়ে তোলায় শিল্পক্ষেত্রে ফ্যাক্টরি প্রথার উদ্ভব ঘটে। [3] পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ: ধনী শিল্পপতিরা তাদের কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশের বাজারে অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ক্রমে এই ধনী পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উদ্ভব হয়।  [4] মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির উদ্ভব: শ

শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে এবং পরবর্তীকালে ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্পায়নের প্রসারের ফলে শিল্পকারখানার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকশ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকশ্রেণির আবির্ভাবের কিছুকাল পর বিভিন্ন দেশে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। [1] আন্দোলনের কারণ: শ্রমিকশ্রেণি বিভিন্ন কারণে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। যেমন- [1] শ্রমিকদের কম মজুরি, [ii] তাদের প্রতিদিন অন্তত ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা, [iii] তাদের কাজের কোনো নিরাপত্তা বা নিশ্চয়তা না থাকা, [iv] শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের অনাহারে-অর্ধাহারে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, [v] চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় তাদের অনেকের অকালমৃত্যু প্রভৃতি। [2] লুডাইট দাঙ্গা: সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। দুর্দশাগ্রস্ত জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শ্রমিকরা কারখানার যন্ত্রপাতিগুলি ভেঙে ফেলতে থাকে। এটি 'লুডাইট দাঙ্গা' (১৮১১- ১৭ খ্রি.) নামে পরিচিত। [3] চার্টিস্ট আন্দোলন: ইংল্যান্ডের শ্রমিকরা ভোটাধিকার ও গোপন ব্যালটে নির্বাচনের দাবিতে তীব্র আন্দোলন করে। এটি চার্টিস্ট আন্দোলন (১৮৩৮ খ্রি.) নামে পরিচিত। [4] কম্বলধারীদের অভিযান: ব্রিটিশ সরকার শ্রমিকদের সভা

আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের সম্পর্কে আলোচনা করো।

ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আদি সমাজতন্ত্রবাদীগণ অষ্টাদশ শতকের শেষ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে বেশকিছু চিন্তাবিদ শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রচার শুরু করেন। [1] প্রচারকগণ: প্রথমদিকে যারা শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রচার করেন তারা আদি সমাজতন্ত্রী নামে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁ সিমোঁ (১৭৬০-১৮২৫ খ্রি.), রবার্ট ওয়েন (১৭৭১- ১৮৫৮ খ্রি.), শার্ল ফুরিয়ের (১৭৭২-১৮৩৭ খ্রি.), জোসেফ প্রুধোঁ (১৮০৯-১৮৬৫ খ্রি.), লুই ব্লাঁ (১৮১১-১৮৮২ খ্রি.), প্রমুখ। এঁরা 'ইউটোপিয়ান' বা 'কল্পনাবিলাসী' সমাজতান্ত্রিক নামে পরিচিত। [2] মতাদর্শ: আদি সমাজ-তন্ত্রীদের মূল বক্তব্য ছিল—[i] সামাজিক শোষণের মূল কারণ হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। [ii] প্রত্যেকে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী উৎপাদন কার্যে অংশ নেবে এবং সকলে সম্পদের সমান অংশীদার হবে। [iii] রাষ্ট্রের কর্তব্য হল সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। জনসাধারণের কল্যাণে সম্পত্তি ব্যবহার করতে হবে। [3] ত্রুট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে 'ত্রিশক্তি চুক্তি'র বিপক্ষে কীভাবে 'ত্রিশক্তি মৈত্রী' গড়ে ওঠে?

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধ ও ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপ পরস্পর-বিরোধী দুটি সশস্ত্র শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়-[1] একদিকে থাকে ইটালি, অস্ট্রিয়াকে নিয়ে গড়ে ওঠা 'ত্রিশক্তি চুক্তি' বা ট্রিপল্ল এলায়েন্স, [2] অন্যদিকে থাকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি দেশকে নিয়ে গঠিত 'ত্রিশক্তি মৈত্রী' বা 'ট্রিপ্ল আঁতাঁত' নামে জোট। ত্রিশক্তি মৈত্রী' বা 'ট্রিপল আঁতাঁত' গঠন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপ্ল আঁতাঁত গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট/কারণ ছিল- [1] কাইজারের বিশ্বরাজনীতি: বিসমার্কের পদচ্যুতির (১৮৯০ খ্রি.) পর জার্মান সম্রাট বা কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বিসমার্কের শান্তিবাদী নীতি ত্যাগ করে বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয় হস্তক্ষেপের নীতি গ্রহণ করেন। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জার্মানিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে স্থাপন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। লর্ড অক্সফোর্ডের মতে, "কাইজার দাবি করেন যে, জার্মানিকে বাদ দিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা চলবে না।" [2] রিইনস্যুরেন্স চুক্তি নাকচ : জার্মান প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে অন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল আলোচনা করো।

১৮৭১ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপে বড়ো ধরনের কোনো যুদ্ধ না হলেও আপাত শান্তির আড়ালে বাতাসে বারুদের গন্ধ পাওয়া  যাচ্ছিল। শান্তির আড়ালে যুদ্ধের এই পরিস্থিতি 'সশস্ত্র শান্তির যুগ' নামে পরিচিত। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে শান্তি ভঙ্গ হয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৮ খ্রি.) বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন- [1] বলকান জাতীয়তাবাদ: এশিয়ার অটোমান তুর্কি শাসকদের অধীনস্থ পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতার দাবিতে ক্রমেই সোচ্চার হয়ে ওঠে। সার্ব জাতি অধ্যুষিত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামে দুটি প্রদেশ সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেও বার্লিন চুক্তির (১৮৭৮ খ্রি.) দ্বারা তাদের জোর করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তাই প্রদেশ দুটিতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। [2] উগ্র জাতীয়তাবাদ: বিংশ শতকের শুরুতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। এই সময় ইউরোপে বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদী মতবাদের উন্মেষ ঘটে এবং ইউরোপের প্রতিটি জাতি নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য জাতিগুলিকে নিক