Ad Code

শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে এবং পরবর্তীকালে ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্পায়নের প্রসারের ফলে শিল্পকারখানার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকশ্রেণির আবির্ভাব ঘটে।

শ্রমিক আন্দোলন

শ্রমিকশ্রেণির আবির্ভাবের কিছুকাল পর বিভিন্ন দেশে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

[1] আন্দোলনের কারণ: শ্রমিকশ্রেণি বিভিন্ন কারণে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। যেমন- [1] শ্রমিকদের কম মজুরি, [ii] তাদের প্রতিদিন অন্তত ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা, [iii] তাদের কাজের কোনো নিরাপত্তা বা নিশ্চয়তা না থাকা, [iv] শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের অনাহারে-অর্ধাহারে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, [v] চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় তাদের অনেকের অকালমৃত্যু প্রভৃতি।

[2] লুডাইট দাঙ্গা: সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। দুর্দশাগ্রস্ত জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শ্রমিকরা কারখানার যন্ত্রপাতিগুলি ভেঙে ফেলতে থাকে। এটি 'লুডাইট দাঙ্গা' (১৮১১- ১৭ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[3] চার্টিস্ট আন্দোলন: ইংল্যান্ডের শ্রমিকরা ভোটাধিকার ও গোপন ব্যালটে নির্বাচনের দাবিতে তীব্র আন্দোলন করে। এটি চার্টিস্ট আন্দোলন (১৮৩৮ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[4] কম্বলধারীদের অভিযান: ব্রিটিশ সরকার শ্রমিকদের সভাসমিতি নিষিদ্ধ করলে শীতকালে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কম্বল নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টারে সেন্ট পিটারের মাঠে জড়ো হয়। এটি 'কম্বলধারীদের অভিযান' নামে পরিচিত।

[5] পিটারলু-র হত্যাকাণ্ড: কম্বলধারীদের অভিযানে শ্রমিকদের ওপর

ব্রিটিশ সেনা গুলি চলালে ১১ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং কয়েকশো শ্রমিক আহত হয়। এই ঘটনা 'পিটারলু-র হত্যাকাণ্ড' (১৮১৯ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[6] শ্রমিক কল্যাণ: শ্রমিকদের আন্দোলনের চাপেㅡ[1] ইংল্যান্ডে ফ্যাক্টরি আইনের (১৮৩৩ খ্রি.) দ্বারা ১০ বছরের কম বয়সি শিশুদের দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করানো নিষিদ্ধ হয়। [ii] শ্রমিকরা ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভোটাধিকার এবং ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের অধিকার পায়।

মূল্যায়ন: শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতার ফলে বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে। লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার শ্রমিকরা বলশেভিক বিপ্লবে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সেদেশে অত্যাচারী জারতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দেশেও শ্রমিকরা | পুঁজিবাদী শাসনকে আতঙ্কিত করে তোলে।