728×90 ads

আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের সম্পর্কে আলোচনা করো।

ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আদি সমাজতন্ত্রবাদীগণ

অষ্টাদশ শতকের শেষ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে বেশকিছু চিন্তাবিদ শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রচার শুরু করেন।

[1] প্রচারকগণ: প্রথমদিকে যারা শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রচার করেন তারা আদি সমাজতন্ত্রী নামে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁ সিমোঁ (১৭৬০-১৮২৫ খ্রি.), রবার্ট ওয়েন (১৭৭১- ১৮৫৮ খ্রি.), শার্ল ফুরিয়ের (১৭৭২-১৮৩৭ খ্রি.), জোসেফ প্রুধোঁ (১৮০৯-১৮৬৫ খ্রি.), লুই ব্লাঁ (১৮১১-১৮৮২ খ্রি.), প্রমুখ। এঁরা 'ইউটোপিয়ান' বা 'কল্পনাবিলাসী' সমাজতান্ত্রিক নামে পরিচিত।

[2] মতাদর্শ: আদি সমাজ-তন্ত্রীদের মূল বক্তব্য ছিল—[i] সামাজিক শোষণের মূল কারণ হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। [ii] প্রত্যেকে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী উৎপাদন কার্যে অংশ নেবে এবং সকলে সম্পদের সমান অংশীদার হবে। [iii] রাষ্ট্রের কর্তব্য হল সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। জনসাধারণের কল্যাণে সম্পত্তি ব্যবহার করতে হবে।

[3] ত্রুটি: আদি সমাজতন্ত্রীদের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল- [i] তারা ছিলেন কল্পনাবিলাসী। বাস্তবতার সঙ্গে তাঁদের যোগ ছিল না। [ii] তাঁরা মনে করতেন যে, মালিকদের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হলেই তাঁরা শ্রমিক- শোষণ বন্ধ করবে। [iii] শ্রেণিসংগ্রাম সম্পর্কে তাঁদের মনে ধারণা গড়ে ওঠেনি। [iv] তারা মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। [v] তাদের মতাদর্শ শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষকে উদ্‌বুদ্ধ করতে পারেনি বা তারা সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি।

[4 ] গুরুত্ব: কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও আদি সমাজতন্ত্রীদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না- [i] আদি সমাজতন্ত্রীরাই সর্বপ্রথম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ত্রুটি- বিচ্যুতিগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন। 
[ii] তাঁদের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ডের শ্রমিকরা ভোটাধিকারের দাবিতে চার্টিস্ট আন্দোলন (১৮৪৮ খ্রি.) শুরু করে। [iii] তাঁদের প্রভাবে ফ্রান্সে জুলাই ও ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে শ্রমিকরা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। [iv] তাদের মতাদর্শই পরবর্তীকালের মার্কসবাদের উৎস ছিল।

মূল্যায়ন: আদি সমাজতন্ত্রীগণ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার উপায় বের করতে পারেননি। পরে কার্ল মার্কস ও তাঁর বন্ধু এঙ্গেলস এই বৈষম্য দূর করার বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় ব্যাখ্যা করেন। এজন্য তাঁরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদী নামে পরিচিত।

Post a Comment

0 Comments