728×90 ads

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বার্কলের অভিমত কী?

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বার্কলের অভিমত


প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। স্বাভাবিকভাবেই তিনি অভিজ্ঞতা তথা ইন্দ্রিয় সংবেদনকে জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান নিঃসৃত হয় অভিজ্ঞতার হাত ধরে। অভিজ্ঞতাকেই তিনি জ্ঞানের মূল মাপকাঠিরূপে স্বীকার করেন। জন লকের পরই অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরূপে প্রসিদ্ধ হলেন জর্জ বার্কলে।

অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর তত্ত্ব: 


অভিজ্ঞতাকে জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে স্বীকার
করে বার্কলে যে বিখ্যাত তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা করেন, তা হল-অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর (Esse-est-Percipi)। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের ওপর। তাঁর মতে, জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের মাধ্যমে যা পাওয়া যায়, একমাত্র সেই বিষয়ই সত্য এবং তারই অস্তিত্ব আছে। আর যা জ্ঞাতার ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের বাইরে, তার কোনো প্রকৃত সত্তা বা বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এভাবেই অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর তত্ত্বের মাধ্যমে বার্কলে একজন খাঁটি অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরূপে গণ্য হন। অবশ্য এরূপ তত্ত্বের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যাই হোক-না-কেন, এ কথা সত্য যে, বার্কলের মতে, শুধু প্রত্যক্ষজাত বিষয়গুলি সম্পর্কেই আমরা জ্ঞান লাভ করে থাকি। 

অমূর্ত ধারণার খণ্ডন: 


বার্কলে যেহেতু একজন প্রকৃত অভিজ্ঞতাবাদী
দার্শনিক, সেহেতু তিনি অমূর্ত ধারণা (abstruct idea)-র বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন যে, অমূর্ত ধারণা বলে যা মনে করা হয়-তার কোনো ইন্দ্রিয় সংবেদন সম্ভব নয়। আর যার কোনোপ্রকার ইন্দ্রিয় সংবেদন পাওয়া যায় না, তার কোনো অস্তিত্বই নেই। সেকারণেই তিনি দাবি করেন যে, লকের দর্শনের প্রধান ত্রুটি এই যে, তিনি অমূর্ত ধারণার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছেন। অমূর্ত ধারণাকে বাস্তবে স্বীকার করার পক্ষে কোনো যৌক্তিকতাই নেই। এরূপ ধারণা শুধু নাম (name)-এর জগতেই সীমাবদ্ধ।

গুণের সমষ্টিরূপে জ্ঞেয় দ্রব্য: 


একজন খাঁটি অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিসেবে বার্কলে প্রত্যক্ষের বাইরে আর অন্য কোনো কিছুকেই স্বীকার করেননি। তিনি দাবি করেন যে, আমরা যখন কোনো বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি বলে দাবি করি, তখন শুধু সেই বস্তুর গুণগুলিকেই প্রত্যক্ষ করি। এই গুণগুলির পশ্চাতে যে জড়দ্রব্য আছে বলে দাবি করা হয়-তাকে আমরা কখনোই প্রত্যক্ষ করতে পারি না। এই সমস্ত জড়দ্রব্যকে আমরা পরোক্ষভাবে অনুমান করি মাত্র। অর্থাৎ শুধু বস্তুর গুণগুলিই আমাদের জ্ঞানের বিষয়রূপে গণ্য হতে পারে, অপ্রত্যক্ষযোগ্য ও অনুমেয় বিষয়গুলি কখনোই জ্ঞানের উৎসরূপে গণ্য হতে পারে না। সুতরাং, আমরা যা প্রত্যক্ষ করি তা গুণের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই গুণগুলি হল জ্ঞেয় বিষয়।

অধ্যাত্ম বিষয়ের জ্ঞান

বার্কলে তাঁর জ্ঞানতত্ত্বে জড়দ্রব্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি অধ্যাত্ম দ্রব্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর মতে অধ্যাত্ম দ্রব্য হল দু-প্রকারের- জীবাত্মা এবং ঈশ্বর। তাঁর মতে, প্রত্যক্ষকর্তা তথা সংবেদন কর্তারূপে জীবাত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত। তিনি আরও বলেন যে, যদিও আমরা আত্মাকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না, তবুও আমাদের আত্মার প্রত্যয় (notion) হয়। এরূপ প্রত্যয়ের মাধ্যমেই সাক্ষাৎভাবে আত্মচেতনায় আত্মাকে জানা যায়। আবার তিনি জীবাত্মার প্রত্যক্ষকে সসীমরূপে গণ্য করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, সসীম প্রত্যক্ষকর্তারূপে জীবাত্মার সব কিছু প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। সব কিছুকেই প্রত্যক্ষ করতে পারেন একমাত্র ঈশ্বর। এভাবেই তিনি সার্বিক প্রত্যক্ষকর্তারূপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও ঈশ্বরের জ্ঞানকে স্বীকার করে নিয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments