অধিক জলসেচের বিপদ (Dangers of Overwatering in Irrigation)
প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে জলসেচের ফলে শস্য উৎপাদন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি মৃত্তিকার স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। অধিক জলসেচজনিত বিপদগুলিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ-এই দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রত্যক্ষ বিপদ:
(i) কৃষিজমির গুণগত মানের অবনমন : জলসেচের সুবিধা থাকায় সারাবছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পায়। (ii) অক্সিজেনের ঘাটতি: অতিরিক্ত জলসেচের ফলে ভূমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং জলমগ্ন মৃত্তিকায় অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় উদ্ভিদের মূল পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। (iii) উদ্ভিদের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা: জলমগ্ন ভূমিভাগে শক্তির পরিবহণ কম হওয়ায় উদ্ভিদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমস্যা লক্ষ করা যায়। (iv) উদ্ভিদের শিকড়ের রোগ: জলমগ্ন মৃত্তিকায় জীবাণুর ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্ভিদের শিকড়ে পচন রোগ জনিত সমস্যা দেখা যায়। (v) উদ্ভিদের অন্যান্য রোগ: জলমগ্ন ভূমিভাগে উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। (vi) উপকারী প্রাণীর মৃত্যু: অতিরিক্ত মাত্রায় জলসেচের ফলে মাটির বিভিন্ন উপকারী প্রাণী, যেমন-ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো প্রভৃতির মৃত্যু হয়। (vii) মৃত্তিকার তাপমাত্রা হ্রাস: অধিকমাত্রায় জলসেচের কারণে মাটির তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং এর ফলস্বরূপ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ব্যাকটেরিয়া কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। (viii) বিষাক্ত পদার্থ সৃষ্টি: দীর্ঘ সময় ধরে মাটি জলমগ্ন থাকার ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ যেমন-ভোলাটাইল ফ্যাটি অ্যাসিড (Volatile Fatty Acid), হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। (ix) জলদূষণের সমস্যা: ভূমিতে অতিরিক্ত জলসেচের ফলে জলপ্রবাহের সঙ্গে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ধুয়ে গিয়ে সংলগ্ন জলাশয়ে এসে পড়ে এবং জলদূষণ ঘটায়।
0 Comments