728×90 ads

খনিজ সম্পদ

ভূমিকা: খনিজ ও শক্তি সম্পদ আধুনিক শিল্প ও সভ্যতার বুনিয়াদ রচনা করে। অতীতে 'তাম্রযুগ' থেকেই খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সূত্রপাত ঘটে। শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন খনিজ ও শক্তি সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কোনো স্থানের অর্থনৈতিক বিকাশ সেই স্থানের খনিজ ও শক্তি সম্পদের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে।

খনিজ সম্পদ (Mineral Resource)


খনিজের ধারণা (Concept of Minerals)


খনিজ হল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট রাসায়নিক যৌগ, যা সাধারণত কেলাস গঠনযুক্ত। অজৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খনিজের একটি সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন হয়েছে। 2017 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে বলা যায়, পৃথিবীতে প্রায় 5300 প্রকার খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বৈশিষ্ট্য: খনিজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল- পৃথিবীর সর্বত্র সমস্ত খনিজ সম্পদ সমানভাবে পাওয়া যায় না। ② মানুষের দক্ষতা ও কারিগরি কৌশলের দ্বারা খনিজ সম্পদের ব্যবহারযোগ্যতা নির্ধারিত হয়। ③ কয়লা ও খনিজতেল ছাড়া অধিকাংশ খনিজ সম্পদ অজৈব প্রকৃতির। খনিজ সম্পদ অপুনর্ভব প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থাৎ বারংবার ব্যবহারের ফলে এগুলি ফুরিয়ে যেতে পারে। কোনো অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের ওপর খনিজ সম্পদের প্রাপ্যতা নির্ভর করে। কিছু খনিজ, যেমন-রুপো, তামা প্রভৃতি পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব।

খনিজ সম্পদের প্রকারভেদ (Classification of Mineral Resource)


প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে খনিজ সম্পদকে নিম্নলিখিত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়-

ধাতব খনিজ (Metallic Minerals): যেসব খনিজ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়, তাদের ধাতব খনিজ বলা হয়। ওজন হ্রাসশীল কাঁচামাল হিসেবে শিল্পে ধাতব খনিজের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এগুলিকে তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত করা যায়- (a) লৌহবর্গীয় খনিজ (Ferrous Minerals): যে ধাতব খনিজগুলিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকে, তাকে লৌহবর্গীয় খনিজ বলে। যেমন-ম্যাগনেটাইট, হেমাটাইট প্রভৃতি। (b) লৌহ-সংকর খনিজ (Ferro-Alloy Minerals): লোহার সঙ্গে যে ধাতব খনিজকে মিশ্রিত করে সংকর লোহা ও ইস্পাত তৈরি করা হয়, তাকে লৌহ-সংকর খনিজ বলে। যেমন-সিসা, তামা, টিন, দস্তা প্রভৃতি। (c) অ-লৌহবর্গীয় খনিজ (Non-Ferrous Minerals): যেসমস্ত ধাতব খনিজ থেকে লোহা জাতীয় ধাতু বা লোহা ছাড়া অন্য কোনো ধাতু পাওয়া যায়, তাদের অ-লৌহবর্গীয় খনিজ বলে। যেমন-বক্সাইট, টিন, তামা প্রভৃতি।

অধাতব খনিজ (Non-Metallic Minerals): যেসব খনিজ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না, তাদের অধাতব খনিজ বলে। অনুজ্জ্বল প্রকৃতির এই খনিজগুলি সরাসরি শিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়। ধাতব খনিজ আবার তিন প্রকার- (a) রাসায়নিক খনিজ (Chemical Minerals): যেসব অধাতব খনিজ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, কীটনাশক, ওষুধ প্রভৃতি উৎপাদন করা যায়, তাদের রাসায়নিক খনিজ বলে। যেমন-ডলোমাইট, গন্ধক, লবণ, ফসফেট প্রভৃতি। (b) স্থাপত্য খনিজ (Structural Minerals): যেসব অধাতব খনিজ রাস্তা, বাড়ি, সৌধ প্রভৃতি গঠনে ব্যবহৃত হয়, তাদের স্থাপত্য খনিজ বলে। যেমন-মার্বেল, চুনাপাথর, গ্র্যানাইট, জিপসাম প্রভৃতি। (c) অন্যান্য অধাতব খনিজ (Other Non-Metallic Minerals): অন্যান্য অধাতব খনিজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিনামাটি, গ্রাফাইট, অভ্র প্রভৃতি। • জ্বালানি খনিজ (Fuel Minerals): যেসব খনিজ দহন করার ফলে তাপ ও শক্তি উৎপাদিত হয়, তাদের জ্বালানি খনিজ
বলে। জ্বালানি খনিজকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায়-(a) কঠিন জ্বালানি খনিজ: কয়লা, (b) তরল জ্বালানি খনিজঃ খনিজ তেল, (c) গ্যাসীয় জ্বালানি খনিজঃ প্রাকৃতিক গ্যাস, (d) পারমাণবিক খনিজঃ (এই খনিজ থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হওয়ায়, একে তেজস্ক্রিয় খনিজও বলে।) থোরিয়াম, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি। 

Post a Comment

0 Comments