728×90 ads

কান্ট কোন্ ধরনের দার্শনিক? বুদ্ধিবাদী না অভিজ্ঞতাবাদী?

বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কান্টের অভিমত

 বুদ্ধিবাদ অনুসারে, বুদ্ধিই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস। অর্থাৎ, বুদ্ধির মাধ্যমেই সমস্ত জ্ঞান লাভ করা যায়। বুদ্ধি ছাড়া আর অন্য কোনো মাধ্যমেই জ্ঞান লাভ করা যায় না। বুদ্ধিবাদীরা তাই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাকে নস্যাৎ করেছেন এবং বলেছেন যে, অভিজ্ঞতা কখনোই সার্বিক জ্ঞান দিতে পারে না।

অপরদিকে, অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী, ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল আমাদের জ্ঞানলাভের একমাত্র উৎস। অভিজ্ঞতা ছাড়া আর অন্য কোনোভাবেই জ্ঞান লাভ করা যায় না। অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ তাই বুদ্ধির বিষয়টিকে নস্যাৎ করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, বুদ্ধি কখনোই নিশ্চিত জ্ঞানদানে সমর্থ নয়।

জ্ঞানের উৎপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কান্টের বক্তব্য: 


প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট দাবি করেন যে, জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধিবাদ বা অভিজ্ঞতাবাদ-কোনোটিই সন্তোষজনক মতবাদ নয়। কারণ, বুদ্ধি অথবা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা কখনোই সমস্তপ্রকার জ্ঞান লাভ করতে পারি না। বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদ উভয়েই জ্ঞানের আংশিক বিষয়কে উল্লেখ করে, কখনোই সার্বিক বিষয়কে নয়। আমাদের বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা-দুটোই অত্যন্ত সীমিত। সেকারণেই এই দুটি মতবাদ দ্বারা জ্ঞানের সার্বিক বিষয়কে পাওয়া যায় না। তাই কান্ট দাবি করেন যে, জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা উভয়েরই প্রয়োজন। জ্ঞান কখনোই এককভাবে বুদ্ধি অথবা অভিজ্ঞতার বিষয় নয়। এ হল বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার যৌথ ফসল।

অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানের 'উপাদান' আর বুদ্ধির দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানের 'আকার': 


কান্টের মত অনুযায়ী, জ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা তথা ইন্দ্রিয় সংবেদনের প্রয়োজন, কারণ তা আমাদের জ্ঞানের উপাদান (matter) সরবরাহ করে। জ্ঞান পেতে গেলে তার উপাদানপ্রাপ্তির অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু শুধু উপাদানকে কখনোই জ্ঞান বলা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন জ্ঞানের আকার (form)। জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিই আকারটিকে দান করে। আবার শুধু আকারকেও জ্ঞান বলা যায় না। কারণ, আকার প্রদত্ত হয় উপাদানের ওপর। সুতরাং, জ্ঞানের ক্ষেত্রে উপাদানের যেমন প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন হয় আকারেরও। তাই কান্টের মতানুসারে অভিজ্ঞতা ছাড়া বুদ্ধি হল অন্ধ এবং বুদ্ধি ছাড়া অভিজ্ঞতা হল শূন্যগর্ভ।

Post a Comment

0 Comments