728×90 ads

কার্যকারণ সম্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বা লৌকিক মত কী?

কার্যকারণ ও সম্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ তথা লৌকিক মত


কার্যকারণ সম্বন্ধ বিষয়ে সাধারণ বা লৌকিক মত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কার্যকারণ সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই মূলত এরূপ মতবাদটি গড়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় পাওয়া লৌকিক বিশ্বাসই হল এরূপ মতবাদের মৌল ভিত্তি। সে কারণেই কার্যকারণ সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের মতবাদকে লৌকিক মতবাদরূপে গণ্য করা হয়। কার্যকারণ সম্পর্কিত লৌকিক মতবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

[1] কারণ ও কার্য সমকালীন ও পারস্পরিকভাবে সম্বন্ধযুক্ত: লৌকিক মতে, কারণ ও কার্য হল দুটি সমকালীন ঘটনা এবং একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাঁদের মতে, এই পার্থিব জগতে কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। হঠাৎ বা দৈবাৎ কোনো কিছুই ঘটতে পারে না। তাই একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনার কারণ বা কার্যরূপে গণ্য হয়।

[2] কারণ হল কার্যের পূর্ববর্তী

লৌকিক মতে, যে দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ পরিলক্ষিত হয়, তাদের মধ্যে আগে যে ঘটনাটি ঘটে, তাকেই বলা হয় কারণ। আর কারণের পরে যে ঘটনাটি ঘটে, তাকে বলা হয় কার্য। তাই কারণকে কার্যের অগ্রগামীরূপে উল্লেখ করা হয় এবং কার্যকে কারণের অনুগামীরূপে দাবি করা হয়।

[3] কার্য উৎপাদনের শক্তি হিসেবে কারণ: '

একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনার কারণ'-এরূপ বলার অর্থই হল, কারণরূপ ঘটনাটির মধ্যে এমনই এক শক্তি থাকে, যার দ্বারা কার্যরূপ ঘটনাটির উৎপত্তি তথা আবির্ভাব হয়। সুতরাং, কারণরূপ শক্তির মূর্তপ্রকাশই হল কার্য। একইভাবে, দুধের মধ্যে পুষ্টিসাধক ক্ষমতা নিহিত আছে বলেই আমরা দাবি করি, দুধ পান করলে দৈহিক পুষ্টি হয়। অর্থাৎ, দুধই হল পুষ্টির কারণ। সুতরাং, কারণ ঘটলে তার কার্য অবশ্যই ঘটবে।

[4] কার্যের উৎপাদকরূপে কারণ

যে ঘটনা অন্য একটি ঘটনাকে ঘটায়, তাকেই বলা হয় কারণ। আর যা ঘটে তাকেই বলা হয় কার্য। তাই কারণ হল কার্যের স্রষ্টা, আর কার্য হল কারণের সৃষ্টি। কারণ ও কার্যের মধ্যে তাই স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক বিদ্যমান। কুমোর যখন মাটির ঘট সৃষ্টি করে, তখন কুমোরকে বলা হয় কারণ, আর সৃষ্ট মাটির ঘটকে বলা হয় কার্য।

[5] কারণ ও কার্যের অনিবার্য বা আবশ্যিক সম্পর্ক: 

লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী, কোনো কারণ উপস্থিত থাকলে তার কার্যও উপস্থিত হবে। অন্যভাবে বলা যায় যে, কোনো কার্য উৎপন্ন হলে তার পিছনে একটি কারণ অবশ্যই থাকবে। অর্থাৎ, কারণ ও কার্যের মধ্যে একপ্রকার অনিবার্য সম্বন্ধ আছে। সুতরাং, কারণ ও কার্য কখনোই বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। এভাবেই ক-কে খ-এর কারণরূপে উল্লেখ করলে, বলতে হয় যে ক ঘটলে খ ঘটবেই।

Post a Comment

0 Comments