Ad Code

বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের ওপর অদ্বৈত বেদান্তের প্রভাব কী?

বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের ওপর অদ্বৈত বেদান্তের প্রভাব

সমসাময়িক ভারতীয় চিন্তাধারার ক্ষেত্রে দুজন বিশিষ্ট ভারতীয় চিন্তানায়ক হলেন যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ এবং মহান কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বামী বিবেকানন্দের 'কর্মযোগ' ও রবীন্দ্রনাথের 'মানবতাবাদ' আধুনিক ভারতবাসীকে জীবনের এবং অমূল্য দিশা দেখিয়েছে।

যুগাবতার স্বামী বিবেকানন্দ উপনিষদ তথা বেদান্তের চিন্তাধারায় তাঁর দার্শনিক উপলব্ধিকে পুষ্ট করেছেন। বেদান্ত দর্শনের মূলভিত্তি হল- উপনিষদ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এবং ব্রহ্মসূত্র নামক প্রস্থানত্রয়। উপনিষদ বেদান্তের শ্রুতি প্রস্থান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বেদান্তের স্মৃতি প্রস্থান এবং ব্রহ্মসূত্র বেদান্তের ন্যায় প্রস্থানরূপে গণ্য হয়। স্বামী বিবেকানন্দ যেহেতু অদ্বৈত বেদান্তের চিন্তাধারার বাহক, সেজন্য তাঁর প্রত্যেকটি দার্শনিক উপলব্ধির ক্ষেত্রেই এই তিনটি প্রস্থানেরই ছাপ পাওয়া যায়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ এবং কর্মযোগ প্রভৃতি বিষয় বিবেকানন্দের দার্শনিক উপলব্ধির ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর দার্শনিক উপলব্ধির ক্ষেত্রে কর্মযোগ-এর ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

রবীন্দ্রনাথ অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারায় এক ও অদ্বিতীয় ব্রন্থের প্রকাশ হিসেবে জীব তথা মানুষের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মানুষের অস্তিত্ব এবং মর্যাদা তাই তাঁর কাছে সবার ঊর্ধ্বে। সেজন্যই রবীন্দ্রনাথ যেখানেই মানুষ ও মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। তিনি তাই মনুষ্যত্ববোধ বা মানবতাবাদের এক অগ্রণী প্রবক্তারূপে গণ্য হন।


বিবেকানন্দের কর্মযোগের মূল বক্তব্য


স্বামী বিবেকানন্দের মতে লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয়, সুকৃতি-দুষ্কৃতি প্রভৃতি সমস্ত কিছুকেই সমান জ্ঞান করে কর্মের অনুষ্ঠান বা সম্পাদন করাই হল কর্মযোগ। এরূপ কর্মযোগের ওপরই বিবেকানন্দের দার্শনিক চিন্তন একান্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অনাসক্ত হয়ে, সমুদয় কর্মের ফলত্যাগ করে নিষ্কামভাবে নিরন্তর কর্ম করে যাওয়াই হল কর্মযোগের মূল আদর্শ। সুতরাং, কর্মযোগ নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্ম দ্বারা মুক্তিলাভ করার এক নীতি ও প্রণালী। এই কর্মযোগের মাধ্যমে আমাদের সমস্তপ্রকার দৈহিক ও মানসিক উত্তরণ ঘটে।


রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদের মূল বক্তব্য


মানবতাবাদের মূল অর্থ হল মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা। ব্যক্তি, জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করাই হল মানবতাবাদের মূল পরিচয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন সমসাময়িক ভারতীয় দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর রচনাবলির মধ্যে দিয়ে তিনি মানবধর্ম তথা মানবতাবাদ (humanism)- কেই অত্যন্ত জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর জীবনব্যাপী সাধনার উদ্দেশ্য ছিল মানবধর্মের জয় গান। 'মানুষের ধর্ম' প্রবন্ধে ও 'Religion of Man' গ্রন্থে মানবতাবাদ সম্পর্কে তাঁর ধ্যানধারণাকে তিনি অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথই হলেন প্রথম চিন্তানায়ক, 

যিনি মানবতাবাদকে মানুষের প্রকৃত ধর্ম হওয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের আগে অনেকেই মানবতাবাদের ধ্বজা তুলে ধরলেও রবীন্দ্রনাথই প্রথম যুক্তিনিষ্ঠভাবে মানবতাবাদকেই আধুনিক মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন এবং যুক্তিনিষ্ঠভাবে বিষয়টিকে প্রমাণ করেছেন। সেকারণেই তিনি মানুষকে দেবতার অপার মহিমায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষকে জীবনদেবতা রূপে উল্লেখ করেছেন।