আত্মগত ভাববাদের পরিপ্রেক্ষিতে বার্কলের মূল বক্তব্য
বার্কলের মতে, এই জগতে শুধুমাত্র জ্ঞাতার মন এবং মনের ধারণাই আছে। এর অতিরিক্ত আর কোনো কিছুই নেই। আর ধারণাগুলি অবশ্যই জ্ঞাতার মননির্ভর। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে এরূপ মতবাদই আত্মগত ভাববাদ (subjective idealism) নামে খ্যাত। আত্মগত ভাববাদের সপক্ষে বার্কলের মূল বক্তব্যগুলি হল:
জ্ঞানের মৌল উৎস অভিজ্ঞতা:
ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাই হল আমাদের সমস্ত জ্ঞানের মৌল উৎস। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা-নিরপেক্ষভাবে কোনো জ্ঞানই উৎসারিত হতে পারে না। সে কারণেই বার্কলের দর্শনের মৌল ভিত্তিতে অভিজ্ঞতাকেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
বস্তুর ধারণাই জ্ঞান:
ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় আমরা যা জানতে পারি, তা হল
বস্তুর ধারণা, কখনোই বস্তু নয়। বস্তু হল আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার বাইরের বিষয়। বস্তুর ধারণাকে সাধারণত বস্তু বা বস্তুধর্মরূপে উল্লেখ করা হয়। কারণ, ধারণার মাধ্যমেই আমরা বস্তুকে জানি। যে কারণেই বলা হয় যে, বস্তুর ধারণার মাধ্যমেই আমাদের বস্তুজ্ঞান হয়।
অলীকরূপে জড়দ্রব্যের অস্তিত্ব:
ধারণার পশ্চাতে যে অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় আধাররূপ জড়দ্রব্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়েছে, তা অবশ্যই এক যুক্তিহীন ও অবাস্তব ব্যাপার। সুতরাং, জড়দ্রব্যের অস্তিত্ব অলীকরূপেই গ্রাহ্য।
মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যহীনতা:
লকের মতে, ধারণা গঠিত হয় মুখ্য ও গৌণ গুণের সমন্বয়ে। বার্কলে মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যকে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, মুখ্য ও গৌণ-এই উভয় প্রকার গুণই হল জ্ঞাতার মননির্ভর। সেকারণেই বলা যায় যে, এই উভয় প্রকার গুণই হল একই। সুতরাং, এদের মধ্যে প্রকৃত কোনো পার্থক্য নেই।
অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর:
বার্কলের আত্মগত ভাববাদের দাবি হল যে,
আমাদের প্রত্যক্ষের ওপর কোনো কিছুর অস্তিত্ব নির্ভরশীল হয়। তাঁর মূল তত্ত্বই হল অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর। অর্থাৎ বলা যায় যে, আমাদের প্রত্যক্ষের উপরই সমস্ত জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে।
অস্তিত্বশীল বিষয়রূপে ধারণা:
ধারণাই হল শুধু অস্তিত্বশীল বিষয়, কারণ এগুলিকে প্রত্যক্ষ করা যায়। ধারণা ছাড়া আর অন্য কোনো কিছুই প্রত্যক্ষযোগ্য নয় এবং তাই সেগুলি অস্তিত্বশীলও নয়। সে কারণেই বলা যায় যে, শুধু ধারণারই অস্তিত্ব আছে, অন্য কোনো কিছুর নেই।
জড়বস্তুর অনস্তিত্বশীলতা:
এই জগতে শুধু জ্ঞাতা, জ্ঞাতার মন ও তার
ধারণাই আছে। জড়বস্তু বলে কোনো কিছু নেই। জড় বস্তুগুলির অস্তিত্ব আছে বলে আমরা যে দাবি করি, তা একেবারেই মিথ্যা।
অহংসর্বস্ববাদ:
বার্কলের আত্মগত ভাববাদের অনিবার্য পরিণতি হল
অহংসর্বস্ববাদ (solipcism)। কারণ, কেবল আমার (অহং) এবং আমার ধারণা ছাড়া আর কোনো কিছু স্বীকৃত হয়নি। অবশ্য এই অহংসর্বস্ববাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বার্কলে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করেছেন।
0 Comments