যুক্তির মূলভিত্তিই হল বচন (Proposition), কারণ বচন ছাড়া কোনো যুক্তিই গঠিত হতে পারে না। সুতরাং যুক্তিবিজ্ঞানে বচনের যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু যুক্তিবিভাজনে বচনের থেকেও আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বচনের আকার (Proposition Form)-কে। বচনের আকার বলতে বোঝায় বচনের একটি নির্দিষ্ট কাঠামোকে। এরূপ কাঠামোয় উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদগুলোকে পরিবর্তন করলেও তার কাঠামো বা আকারটি একই থাকে। অর্থাৎ বচনের আকারের একটি নির্দিষ্টতা ও সার্বিকতা আছে-যার ফলে তার সত্যমূল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোনো ভ্রান্তি ঘটে না।
তর্কবিজ্ঞানে আমরা বিভিন্ন রকম বচন পেয়ে থাকি। আবার বিভিন্ন রকম বচনের বিভিন্ন আকারও পেয়ে থাকি।
নিরপেক্ষ বচনের আকার (Propositional Form of Categorical Proposition)
নিরপেক্ষ বচন চার প্রকারের-
সদর্থক, সামান্য-নঞর্থক, সদর্থক, বিশেষ- বিশেষ-নঞর্থক। এই চার প্রকারের নিরপেক্ষ বচনের আকারগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল-
1) সামান্য-সদর্থক বা A বচনের আকার:
সকল S হয় P (A); অর্থাৎ, এর রূপ হল [সকল. হয়........।] এর মূর্তরূপ হল- সকল কবি হয় দার্শনিক (A)।
2) সামান্য-নঞর্থক বা E বচনের আকার:
কোনো S নয় P (E); অর্থাৎ, এর রূপ হল [কোনো......... নয়.........।] এর মূর্তরূপ হল-
কোনো মানুষ নয় সুখী (E)।
নিরপেক্ষ বচন
সামান্য বা সার্বিক-সদর্থক = A বচন
এর আকার: সকল Sহয় P
উদাহরণ: সকল মানুষ হয় মরণশীল (A)।
সামান্য বা সার্বিক-নঞর্থক = E বচন
এর আকার: কোনো Sহয় P
উদাহরণ: কোনো মানুষ নয় মরণশীল (E)।
বিশেষ-সদর্থক = 1 বচন
এর আকার: কোনো কোনো S হয় P
উদাহরণ: কোনো কোনো মানুষ হয় মরণশীল (I)।
বিশেষ-নঞর্থক = 0 বচন
এর আকার: কোনো কোনো হয় P
উদাহরণ: কোনো কোনো মানুষ নয় মরণশীল (০)।
3) বিশেষ-সদর্থক তথা। বচনের আকার:
কোনো কোনো S হয় P (I); অর্থাৎ, এর রূপটি হল [কোনো কোনো...হয়] এর মূর্তরূপ হল-
কোনো কোনো মানুষ হয় সৎ (I)।
4) বিশেষ-নঞর্থক তথা ০ বচনের আকার:
কোনো কোনো S নয় P (O); অর্থাৎ, এর রূপটি হল [কোনো কোনো................. এর মূর্তরূপ হল-
কোনো কোনো মানুষ নয় সৎ (০)।
সাপেক্ষ বচনের আকার (Proposition Form of Conditional Propositions)
সাপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রে আমরা একটি শর্ত (Condition)-কে উল্লেখ করে থাকি। 'সাপেক্ষ বচন দু-প্রকারের- (i) প্রাকল্পিক বচন (Hypothetical Proposition) এবং (ii) বৈকল্পিক বচন (Disjunctive Proposition)।
সাপেক্ষ বচন
- প্রাকল্পিক বচনের আকার: "যদি P তবে Q" উদাহরণ: যদি বৃষ্টিপাত হয় তবে মাটি ভিজবে।
- বৈকল্পিক বচনের আকার: "হয় P অথবা Q" উদাহরণ: হয় তুমি পাহাড়ে যাবে অথবা তুমি সমুদ্রে যাবে।
1) প্রাকল্পিক বচন ও তার আকার: প্রাকল্পিক বচন হল সেই বচন, যা "যদি... তবে..." নামক শব্দগুচ্ছ দ্বারা গঠিত। যেমন- "যদি বৃষ্টি পড়ে তবে মাটি ভিজবে।" প্রাকল্পিক বচনের অংশ হল দুটি পূর্বগ (Antecedent) এবং অনুগ (Consequent)। যে ঘটনাটি আগে ঘটে, তাকে বলে পূর্বগ এবং যে ঘটনাটি পরে ঘটে তাকে বলে অনুগ। অনুগ সর্বদা পূর্বগকে অনুসরণ করে চলে। ওপরের উদাহরণটির ক্ষেত্রে বৃষ্টি পড়া হল পূর্বগ, আর মাটি ভেজা হল অনুগ। প্রাকল্পিক বচনের আকারটিকে যেভাবে উল্লেখ করা যায়, তা হল- যদি P তবে Q. # যদি P নয় তবে Q নয় ইত্যাদি।
2) বৈকল্পিক বচন ও তার আকার: বৈকল্পিক বচন হল সেই বচন, যা 'হয়....... অথবা...' নামক শব্দগুচ্ছ দ্বারা গঠিত। যেমন-হয় তুমি শিক্ষক হবে অথবা তুমি ডাক্তার হবে। বৈকল্পিক বচনের অংশ হল দুটি-প্রথম বিকল্প ও দ্বিতীয় বিকল্প। যে অংশটি প্রথমে থাকে, সেটি প্রথম বিকল্প এবং যে অংশটি পরে থাকে, সেটি দ্বিতীয় বিকল্প। বৈকল্পিক বচনের আকার- হয় P অথবা Q. হয় P নয় অথবা নয় ইত্যাদি।