ভূতাপ শক্তির ধারণা:
ভূ-অভ্যন্তরের তাপ গাইসার, উন্ন প্রস্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে নির্গত হওয়ার সময় যে শক্তি উৎপাদন করা হয় তাকে ভূতাপ শক্তি বলে। এটি একপ্রকার পুনর্ভব, প্রবহমান সম্পদ।
আরও পড়ুন:- সমুদ্রতরঙ্গ শক্তি (Sea Wave Energy)
ভূতাপ শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি:
পৃথিবীর যেসব স্থানে উয় প্রস্রবণ ও গাইসার আছে সেখানে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের জন্য। দুটি নল ব্যবহার করা হয়। এই দুটি নল ভূগর্ভে প্রায় 3000-3100 মিটার গভীরতায় প্রবেশ করানো হয় এবং অপেক্ষাকৃত বড়ো নলের মাধ্যমে সাধারণ তাপমাত্রার জল ভূগর্ভে প্রেরণ করা হয়। ওই জল ভূগর্ভের তাপে বাষ্পে পরিণত হয় এবং প্রচণ্ড চাপের প্রভাবে ছোটো নল দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন:- ভূতাপ শক্তি (Geothermal Energy)
ভূতাপ শক্তির উৎস:
পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ পৃথিবীর জন্মকাল থেকেই অত্যন্ত উত্তপ্ত। সাধারণত 1 কিমি গভীরতা বৃদ্ধি পেলে উন্নতা বৃদ্ধি পায় গড়ে 25° সে.। তবে গঠনকারী পাতসীমানা অঞ্চলে উন্নতা বৃদ্ধির হার কিছুটা বেশি, অন্যদিকে কঠিন ও প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত স্থানে উয়তা বৃদ্ধির হার কম। এ ছাড়া ভূগর্ভে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঞ্চয় রয়েছে, যেগুলি থেকে তাপ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন :- বায়ুশক্তি (Wind Energy)
ভূতাপ শক্তির প্রয়োগ:
ভূতাপ শক্তিতে প্রধানত নিম্নলিখিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে- (1) বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে, (ii) গ্রিনহাউস পদ্ধতির সাহায্যে ফসল উৎপাদনে, (iii) ফসল শুকনো করার কাজে, (iv) জল গরম করার কাজে, (v) শীতল অঞ্চলে ঘর গরম রাখার জন্য, (vi) কাগজ তৈরিতে, (vii) জমি থেকে বরফ অপসারণের কাজে।
আরও পড়ুন :- জৈবগ্যাস শক্তি (Biogas Energy)
ভূতাপ শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ:
2016 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে, পৃথিবীতে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থান প্রথম। এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি।
ভূতাপ শক্তি-ভারত:
ভারতের ছত্তিশগড়ের তাতাপানি, ঝাড়খণ্ডের সুরজকপ্ত, জম্মু ও কাশ্মীর-এর ঘুমাথাং, উত্তরাখণ্ডের তপোবন, পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর প্রভৃতি স্থানের উয়প্রস্রবণ থেকে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ চলছে। তা ছাড়া হিমাচল প্রদেশের মণিকরণে প্রায় 6 কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।
ভূতাপ শক্তির সুবিধা:
(ⅰ) এই শক্তির প্রভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটে না। (ii) ভূতাপ শক্তি প্রবহমান শক্তি সম্পদ। (iii) বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জটিল প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। (iv) এক্ষেত্রে পৌনঃপুনিক ব্যয় যথেষ্ট কম।
ভূতাপ শক্তির সমস্যা: (i) প্রাথমিক ব্যয় যথেষ্ট বেশি। (ii) ভূতাপ শক্তি পৃথিবীর সব স্থানে পাওয়া সম্ভব নয়। (iii) ভূতাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট কম।
0 Comments