728×90 ads

অপ্রচলিত শক্তি

বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সৌরশক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, সমুদ্রতরঙ্গ শক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, বায়ুশক্তি, জৈব-গ্যাস শক্তি, বর্জ্য পদার্থ পুনরাবর্তিত শক্তি প্রভৃতি।
সৌরশক্তির ধারণা: সূর্য থেকে নির্গত তাপ ও আলো থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে সৌরশক্তি বলে। সৌরশক্তি একটি প্রবহমান, পুনর্ভব প্রকৃতির সম্পদ।

সৌরশক্তির উৎপাদন পদ্ধতি: সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য অন্যতম উপাদান কাহল সৌরকোশ বা পিভি সেল। এই সৌরকোশে থাকে সিলিকন দ্বারা গঠিত সেমি-কনডাক্টর। একাধিক সেল একসঙ্গে মিলে যে প্যানেল গঠিত হয় তার সাহায্যে সৌররশ্মি তাপশক্তিতে ও তাপশক্তি বিদ্যুৎশক্তিতে পরিণত হয়।

সৌরশক্তির ব্যবহার: সৌরশক্তি নিম্নলিখিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়- (i) সৌরকোশের মাধ্যমে উৎপন্ন বিদ্যুতের সাহায্যে পাখা, রেডিয়ো, টিভি, পাম্প চালানো ও রাস্তায় আলো জ্বালানো যায়।
(ii) শীতল অঞ্চলে ঘর উন্ন রাখতে ও জল গরম করতে সৌরহিটার ব্যবহৃত হয়। (iii) সৌর কুকার-এর প্রতিফলকের সাহায্যে সৌরতাপের তীব্রতা বৃদ্ধি করে রান্নার কাজ করা হয়। (iv) সৌরকোশের সাহায্যে বর্তমানে গাড়িও চালানো হচ্ছে। (v) সোলার ড্রায়ার-এর সাহায্যে ফসলের আর্দ্রতা দূর করা যায়। (vi) সৌরপুকুর-এর মাধ্যমে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে শিল্প ও গৃহস্থালির বিভিন্ন প্রয়োজনে ওই গরম জল ব্যবহার করা যেতে পারে। পন্ডিচেরি, কণার্টক ও গুজরাটে এই ধরনের সৌরপুকুর বর্তমান। (vii) সোলার ওয়াটার হিটিং সিস্টেম-এ একটি তাপ সংগ্রাহকের সাহায্যে কোনো জলাধারে সম্ভিত জলের তাপমাত্রা 65°-88° সে. বৃদ্ধি করা সম্ভব। (viii) সোলার ডি-স্যালিনেশন প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে পরিষ্কার পানীয় জল পাওয়া যায়। (ix) কাঠ শুকনো করার জন্য সোলার টিম্বার কিল্ ব্যবহার করা হয়। 

সৌরশক্তি-ভারত: সৌরশক্তি উৎপাদনে ভারত বর্তমানে পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানের অধিকারী। 2022 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে প্রায় 100 GW সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। ভারতে সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধানত সৌরকোশ (সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদন) ও সৌরতাপীয় পদ্ধতির (তাপশক্তি উৎপাদন ও প্রয়োগ) ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

সৌরশক্তির গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য: ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলি হল-পশ্চিমবঙ্গঃ সাগরদ্বীপ, জামুরিয়া; উত্তরপ্রদেশ: কল্যাণপুর, মউ; গুজরাট: চারঙ্ক সৌরপার্ক; তামিলনাড়ুঃ শিবগঙ্গা সৌর প্ল্যান্ট, রাজস্থানঃ যোধপুর, পোখরান; উত্তরাখণ্ড, ওড়িশা প্রভৃতি। ভারতে প্রায় 7 লক্ষ সোলার কুকার ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতের স্থান পৃথিবীতে প্রথম। পৃথিবীর বৃহত্তম সোলার পুকুর গুজরাটের কচ্ছ উপদ্বীপে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রায় 82000 লিটার জল প্রায় 73° সে. পর্যন্ত গরম করা যেতে পারে। এ ছাড়া ভারতে অসংখ্য শিল্পকন্দ্র ও গৃহস্থালিতে সোলার ওয়াটার হিটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। 



সৌরশক্তির সুবিধা: (i) সৌরশক্তি একটি প্রবহমান ও পুনর্ভব সম্পদ। (ii) এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো পৌনঃপুনিক ব্যয় প্রায় নেই। (iii) এই শক্তি পরিবেশ-বান্ধব প্রকৃতির। (iv) মেঘাচ্ছন্নতা থাকলেও প্রয়োজনীয় সৌরশক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। (v) সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহজ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

সৌরশক্তির সমস্যা: (i) এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। (ii) বৃহৎ মাত্রায় উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। (iii) মেরু ও শীতল নাতিশীতোয় অঞ্চলে অথবা একটানা বৃষ্টিপাত চললে সৌরশক্তি উৎপাদন সম্ভব হয় না। (iv) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গঠনের উপযোগী বিস্তৃত জমির অভাব লক্ষ করা যায়। (v) পৃথিবীর বহু অনুন্নত দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি কৌশলের অভাব রয়েছে। (vi) সৌরকোশ তৈরির পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

জোয়ারভাটা শক্তির ধারণা: 


ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় শক্তির উৎসগুলির মধ্যে অন্যতম হল জোয়ারভাটা শক্তি। সূর্য ও চাঁদের আকর্ষণে মহাসাগর-সাগরের জল নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো স্থানে স্ফীত হয় এবং অন্যস্থানে নেমে যায়, যা যথাক্রমে জোয়ার ও ভাটা নামে পরিচিত। জোয়ারভাটার প্রবল গতিবেগসম্পন্ন জলপ্রবাহে টারবাইনের সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তাকে জোয়ারভাটা শক্তি বলে।

জোয়ারভাটা শক্তির উৎপাদন পদ্ধতি: 


খাঁড়ি বা নদীর মোহানা দিয়ে জোয়ারের সময় প্রবেশ করা জল ধরে রাখার জন্য নির্মিত বাঁধে যেসব সুইস গেট রয়েছে, তা দিয়ে জোয়ারের সময় যেমন জল নদীতে প্রবেশ করে, তেমনি ভাটার সময় সুইস গেটের মাধ্যমে জল ছাড়ার ফলে স্রোতের সৃষ্টি হয়। জোয়ারভাটার এই জলস্রোতেই টারবাইন ঘোরানোর ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

জোয়ারভাটা শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ:


1966 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে লা রান্স খাঁড়িতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন অঞ্চলে অধিকাংশ জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের অবস্থান লক্ষ করা যায়। প্রধান দেশগুলি হল-দক্ষিণ কোরিয়া (সিহা লেক-পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, উৎপাদন ক্ষমতা 254 মেগাওয়াট), ফ্রান্স, কানাডা, চিন, রাশিয়া, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য প্রভৃতি। 

জোয়ারভাটা শক্তি ভারত: 


ভারতের বিভিন্ন খাঁড়ি বা নদী মোহানায় জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে (আনুমানিক প্রায় 8500-9500 মেগাওয়াট)। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল এবং গুজরাটের খাম্বাত উপসাগর ও কচ্ছু উপসাগর-এ যথাক্রমে প্রায় 1200, 7100 ও 1100 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুজরাটের কচ্ছ উপকূলে প্রায় 915 মেগাওয়াট এবং পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের দুর্গাদুয়ানি নদী সংলগ্ন খাঁড়ি অঞ্চলে প্রায় 3.4 মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গঠনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে তামিলনাড়ুর চেন্নাই
উপকূলে একটি স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জোয়ারভাটা শক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। 

জোয়ারভাটা শক্তির সুবিধা

(i) জোয়ারভাটা শক্তি একটি পুনর্ভব বা প্রবহমান শক্তি। (ii) এর পৌনঃপুনিক খরচ যথেষ্ট কম। (iii) যে-কোনো উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে খাঁড়ি বা নদীর মোহানা থাকলে সেখানেই শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

জোয়ারভাটা শক্তির সমস্যা

(i) এই শক্তিকেন্দ্র গঠনের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি হওয়ায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এই কেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। (ii) নদীর মোহানা বা খাঁড়ির অবস্থান না থাকলে এই শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব নয়। (iii) উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাব অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। (iv) জোয়ারের লবণাক্ত জলে জোয়ারভাটা শক্তি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সমুদ্রতরঙ্গ শক্তির ধারণা: 

সমুদ্রতরঙ্গের শক্তিকে ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা সমুদ্রতরঙ্গ শক্তিরূপে পরিচিত। অনুকূল বায়ুপ্রবাহের অভাবে অনেকসময় এই শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়। শুধুমাত্র জোয়ারভাটার সময়ই নয়, সাধারণত সবসময়ই এই শক্তি উৎপাদন করা হয়।

সমুদ্রতরঙ্গ শক্তির প্রয়োগ: 

সমুদ্রতরঙ্গ শক্তির সাহায্যে (1) সমুদ্রের লবণাক্ত জলকে লবণমুক্ত করে লবণ উৎপাদন করা হয়। (ii) বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই শক্তি ব্যবহৃত হয়।  

সমুদ্রতরঙ্গ শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ:


পোর্তুগালের উত্তরে অ্যাগুকাডোরা ওয়েভ ফার্ম 2008 খ্রিস্টাব্দে গঠন করা হয়, যা পৃথিবীর প্রথম সমুদ্রতরঙ্গ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র (উৎপাদনক্ষমতা প্রায় 2.3 মেগাওয়াট)। বর্তমানে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে এই শক্তি উৎপাদন করা হয়। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের সাইডার (4 মেগাওয়াট), ওর্কনি (2.5 মেগাওয়াট), ইসলে লিমপেট (0.7 মেগাওয়াট); অস্ট্রেলিয়ার পোর্টল্যান্ড, পশ্চিম। অস্ট্রেলিয়া; আয়ারল্যান্ডের ওয়েভবব, ডেনমার্কের ওয়েভস্টার; বেলজিয়ামের ফলান সি; স্পেনের মুটি কু প্রভৃতি পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সমুদ্র তরঙ্গ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের উদাহরণ। ভারতের তামিলনাড়ু, কেরল ও সুন্দরবনের দুর্গাদুয়ানি খাঁড়িতে এই শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে। 

সমুদ্রতরঙ্গ শক্তির সুবিধা: 


(i) সমুদ্রতরঙ্গ বারংবার ব্যবহারে শেষ হয়ে যায় না। (ii) এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পৌনঃপুনিক ব্যয় যথেষ্ট কম হয়। (iii) পরিবেশদূষণের সম্ভাবনা নেই। 
সমুদ্রতরঙ্গ শক্তির সমস্যা

(1) বৃহদাকার তরঙ্গ ছাড়া শক্তি উৎপাদন সম্ভব নয়। (ii) উৎপাদন ব্যয় অত্যন্ত বেশি। (iii) সাইক্লোনের বা সুনামির ফলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা আছে। (iv) বৃহৎ মাত্রায় উৎপাদন হয় না। (v) এই প্রকার বিদ্যুৎশক্তির সঞ্চয়যোগ্যতা নেই।


ভূতাপ শক্তির ধারণা: 


ভূ-অভ্যন্তরের তাপ গাইসার, উন্ন প্রস্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে নির্গত হওয়ার সময় যে শক্তি উৎপাদন করা হয় তাকে ভূতাপ শক্তি বলে। এটি একপ্রকার পুনর্ভব, প্রবহমান সম্পদ।

ভূতাপ শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি: 


পৃথিবীর যেসব স্থানে উয় প্রস্রবণ ও গাইসার আছে সেখানে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের জন্য। দুটি নল ব্যবহার করা হয়। এই দুটি নল ভূগর্ভে প্রায় 3000-3100 মিটার গভীরতায় প্রবেশ করানো হয় এবং অপেক্ষাকৃত বড়ো নলের মাধ্যমে সাধারণ তাপমাত্রার জল ভূগর্ভে প্রেরণ করা হয়। ওই জল ভূগর্ভের তাপে বাষ্পে পরিণত হয় এবং প্রচণ্ড চাপের প্রভাবে ছোটো নল দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

 ভূতাপ শক্তির উৎস: 

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ পৃথিবীর জন্মকাল থেকেই অত্যন্ত উত্তপ্ত। সাধারণত 1 কিমি গভীরতা বৃদ্ধি পেলে উন্নতা বৃদ্ধি পায় গড়ে 25° সে.। তবে গঠনকারী পাতসীমানা অঞ্চলে উন্নতা বৃদ্ধির হার কিছুটা বেশি, অন্যদিকে কঠিন ও প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত স্থানে উয়তা বৃদ্ধির হার কম। এ ছাড়া ভূগর্ভে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঞ্চয় রয়েছে, যেগুলি থেকে তাপ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।

ভূতাপ শক্তির প্রয়োগ: 


ভূতাপ শক্তিতে প্রধানত নিম্নলিখিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে- (1) বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে, (ii) গ্রিনহাউস পদ্ধতির সাহায্যে ফসল উৎপাদনে, (iii) ফসল শুকনো করার কাজে, (iv) জল গরম করার কাজে, (v) শীতল অঞ্চলে ঘর গরম রাখার জন্য, (vi) কাগজ তৈরিতে, (vii) জমি থেকে বরফ অপসারণের কাজে।

ভূতাপ শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ

2016 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে, পৃথিবীতে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থান প্রথম। এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি। 

ভূতাপ শক্তি-ভারত

ভারতের ছত্তিশগড়ের তাতাপানি, ঝাড়খণ্ডের সুরজকপ্ত, জম্মু ও কাশ্মীর-এর ঘুমাথাং, উত্তরাখণ্ডের তপোবন, পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর প্রভৃতি স্থানের উয়প্রস্রবণ থেকে ভূতাপ শক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ চলছে। তা ছাড়া হিমাচল প্রদেশের মণিকরণে প্রায় 6 কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। 

ভূতাপ শক্তির সুবিধা: 

(ⅰ) এই শক্তির প্রভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটে না। (ii) ভূতাপ শক্তি প্রবহমান শক্তি সম্পদ। (iii) বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জটিল প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। (iv) এক্ষেত্রে পৌনঃপুনিক ব্যয় যথেষ্ট কম।

ভূতাপ শক্তির সমস্যা: (i) প্রাথমিক ব্যয় যথেষ্ট বেশি। (ii) ভূতাপ শক্তি পৃথিবীর সব স্থানে পাওয়া সম্ভব নয়। (iii) ভূতাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট কম।


বায়ুশক্তির ধারণা: 


বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে যে শক্তি উৎপাদন করা হয়, তা বায়ুশক্তি নামে পরিচিত। এই শক্তি প্রবহমান ও পুনর্ভব প্রকৃতির।

বায়ুশক্তি উৎপাদন পদ্ধতি: 


উন্মুক্ত স্থান বা উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের সহায়তায় ব্লেডযুক্ত পাখা ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং পাখার সঙ্গে সংযুক্ত ডায়নামোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। 

বায়ুশক্তির প্রয়োগ : 


প্রাচীনকালে গম ভাঙা, ধান কাটা, কুয়ো থেকে জল তোলা প্রভৃতি কাজে বায়ুশক্তি ব্যবহার করা হত। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনে বায়ুশক্তির ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বায়ুশক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৪১টি দেশে প্রায় 27 হাজার কেন্দ্রে বায়ুশক্তি উৎপাদন করা হয়। 2016 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে, চিন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি বায়ুশক্তি উৎপাদনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের অধিকারী। পৃথিবীতে মোট বায়ুশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ 486749 মেগাওয়াট। 

বায়ুশক্তি-ভারত

ভারত বায়ুশক্তি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থানের অধিকারী (2016 খ্রিস্টাব্দ)। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলি হল-(১) তামিলনাড়ুর চেন্নাই, কায়াথার, কেথানুর, কন্যাকুমারী প্রভৃতি; (ii) কেরলের রামাক্কালমেড; (iii) কর্ণটিকের যোগমাট্টি; (iv) গুজরাটের লাম্বা (এশিয়ার বৃহত্তর বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র); (v) মহারাষ্ট্রের ভেঙ্কুসাওয়াড়ে, (vi) পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ; (vii) অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ, পুথলুর প্রভৃতি। তামিলনাড়ুর উপকূলে এশিয়ার বৃহত্তম 'উইন্ড ফার্ম ক্লাস্টার' ('Wind Farm Cluster') গঠন করা হয়েছে।
তবে ভারতে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বায়ুশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট কম। যদিও প্রায় 46500 মেগাওয়াট বায়ুশক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা ভারতে রয়েছে। 

বায়ুশক্তির সুবিধা: (1) বায়ুশক্তি মূলত পরিবেশমিত্র প্রকৃতির শক্তিসম্পদ। (ii) এই শক্তিকেন্দ্র গঠনের জন্য সময় খুব কম লাগে (iii) বায়ুশস্তি একটি প্রবহমান ও পুনর্ভব শক্তি। (iv) এক্ষেত্রে পৌনঃপুনিক ব্যয় অত্যন্ত কম। (v) সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিবহণ করা সম্ভব। (vi) এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অপেক্ষাকৃত লাভজনক। (vii) দিনের যে-কোনো সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

বায়ুশক্তির সমস্যা: (i) এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় যথেষ্ট বেশি। (ii) সর্বত্র বায়ুপ্রবাহের পরিমাণ সমান না থাকায় বায়ুশক্তি কেন্দ্র পৃথিবীর সব স্থানে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। (iii) বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ অত্যন্ত কম। (iv) কোনো স্থানে একসঙ্গে একাধিক বায়ুশক্তি কেন্দ্রের অবস্থান থাকলে দৃশ্য দূষণজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। (v) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পাখার ব্রেডের সাহায্যে পাখির মৃত্যু ঘটে। (vi) এই শক্তি কেন্দ্রে যন্ত্র চলার সময় উৎপন্ন শব্দ শব্দদূষণ তৈরি করে। (vii) বায়ু শান্তভাবে বা এলোমেলো ভাবে প্রবাহিত হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।


জৈবগ্যাস শক্তির ধারণা: 


জৈব পদার্থকে অক্সিজেন বিহীন অবস্থায় পচিয়ে তা থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন করা হয়, তাকে জৈব গ্যাস বলে। মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি হল গুরুত্বপূর্ণ জৈবগ্যাস। জৈব গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান কাঁচামাল হল গোবর, যদিও গাছ, সার, আবর্জনা থেকেও জৈব গ্যাস তৈরি করা যেতে পারে।

জৈবগ্যাস শক্তির প্রয়োগ: 


জৈব গ্যাস প্রধানত-(i) জ্বালানি হিসেবে জল গরম করা ও রান্নার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। (ii) জৈব গাস থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ কৃষি যন্ত্রপাতি চালানো, আলো জ্বালানো, জমিতে পাম্পের সাহায্যে জলের সরবরাহ প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়। (iii) জৈব গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদিত গোবর কৃষিক্ষেত্রে সার রূপে ব্যবহৃত হয়। 

জৈবগ্যাস শত্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ: 

জৈব গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি হল-

• আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র: 2014 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪.48 বিলিয়ন কিউবিক মিটার জৈব গ্যাস উৎপাদন করে। এই দেশের টেক্সাসে ইথানল গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গোবর গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ভারমেন্ট-এ। 

জার্মানি: 2012 খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুসারে জার্মানি জৈব গ্যাস থেকে প্রায় 2910 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে (ইউরোপ প্রথম স্থানাধিকারী)। বাভারিয়া, লোয়ার স্যাক্সানি প্রভৃতি এই দেশের অন্যতম জৈব গ্যাস শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। এই দেশটি সমগ্র বিশ্বের মোট জৈব গ্যাস শক্তি উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে। 

ভারত: জৈব গ্যাস শক্তি উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 2014-15 খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রায় 20,700 লক্ষ কিউবিক মিটার জৈব গ্যাস উৎপন্ন হয়। ভারতের জৈবগ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটনাকে অনেকে বাদামি বিপ্লব (Brown Revolution) রূপে অভিহিত করেন। ভারতে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের গোসাবা (প্রায় 550 কিলোওয়াট), মোল্লাখালি (প্রায় 510 কিলোওয়াট), কালিম্পং-এর লোলেগাঁও (প্রায় 35 কিলোওয়াট), পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় (প্রায় 120 কিলোওয়াট); দিল্লির কাছে তিমারপুর, পাঞ্জাবের পাতিয়ালা প্রভৃতি স্থানে জৈবগ্যাস শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

এ ছাড়া ব্রাজিল, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চিন, নেপাল প্রভৃতি দেশেও জৈব গ্যাস শক্তি উৎপাদিত হয়।

জৈবগ্যাস শক্তির সুবিধা: (ⅰ) জৈবগ্যাস শক্তি একটি প্রবহমান, পুনর্ভব প্রকৃতির শক্তি। (ii) এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলি সহজেই পাওয়া যায়। (iii) এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ব্যয় ও পৌনঃপুনিক ব্যয় যথেষ্ট কম। (iv) শক্তি উৎপাদনে গোবর থেকে উৎকৃষ্ট প্রকৃতির জৈব সার উৎপাদন করা যায়। (v) এই কেন্দ্রগুলি গঠন করা অত্যন্ত সহজ। (vi) জৈব গ্যাস শক্তি পরিবেশ-মিত্র প্রকৃতির।

জৈবগ্যাস শক্তির সমস্যা: (i) শহরে জৈব গ্যাস শক্তি ব্যবহার অত্যন্ত কম। (ii) উপযুক্ত পরিমাণ কাঁচামালের অভাব লক্ষ করা যায়। iii) বৃহৎ স্কেলবিশিষ্ট উৎপাদন কেন্দ্র গঠন করা যায় না। (iv) এই শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতার অভাব রয়েছে।


বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তির ধারণা: 


বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত অপ্রচলিত শক্তিগুলির মধ্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই শক্তিটিকে 'Waste Energy' বা 'wte' বলা হয়ে থাকে। এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান কাঁচামাল হল-পৌর আবর্জনা, কৃষিজমি থেকে প্রাপ্ত খড়, তুষ, আখের ছিবড়ে প্রভৃতি।

বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি: 


(a) গ্যাসীয়করণ: এক্ষেত্রে শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে দাহ্য হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদিত হয়। (b) জৈব পদার্থের দহন প্রক্রিয়া: কঠিন পৌর বর্জ্য (Municipal Solid Waste (MSW)]-কে পুড়িয়ে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপাদন করে বিদ্যুৎ সৃষ্টি করা হয়। (c) পাইরোলাইসিস: শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে আলকাতরা জাতীয় পদার্থ উৎপাদন করা হয়। (d) অবাত দহনঃ এই পদ্ধতির সাহায্যে মিথেন গ্যাস উৎপাদিত হয়। (e) পচন পদ্ধতিঃ বর্জ্য পদার্থ পচনের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইথানলসহ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। 

বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ: OECD (Organisation of Economically
Co-operative Countries) 


এর প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তি উৎপাদনে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল- (i) জাপান: জাপানে (বিশ্বে প্রথম) বছরের প্রায় 42 মিলিয়ন টন বর্জ্য পদার্থ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। (ii) চিন: চিনে প্রায় 60টি বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। (iii) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র: এই দেশের মিশিগান প্রদেশের অন্তর্গত গ্রেলিং জেনারেটিং (38 MW), ক্যাডিলাক (40 MW), গ্রেটার ডেট্রবেট রিসোর্স রিকভারি (66 MW), জেনেসি (37 MW) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য বর্জ্য শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। 
(Iv) ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য: ডারওয়েন্ট হল, টেসসাইড, পোর্টব্যাক, বিলিংহাম প্রভৃতি এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বর্জ্য শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। 
(V) ভারতঃ ভারতের দিল্লি, লখনউ, বিজয়ওয়াড়া ও হায়দরাবাদে বর্জ্য শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সমগ্র দেশে প্রায় 2800 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। (vi) অন্যান্য :অস্ট্রিয়ার সিডেলাও, গ্রিসের পাত্রোস, সুইডেনের সালমো, জার্মানির এসেন কারনাপ প্ল্যান্ট, মালয়েশিয়ার ভূমি-বায়ো পাওয়ার স্টেশন প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

বর্জ্য পুনরাবর্তনীয় শক্তির সুবিধা:


(1) এটি প্রবহমান, পুনর্ভব শক্তি। (2) এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় যথেষ্ট কম।
(3) পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয়। (4) কাঁচামাল যথেষ্ট সহজলভ্য। (5) পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস পায়।

সমস্যা: (i) উপযোগী উন্নত প্রযুক্তি সর্বত্র পাওয়া যায় না। (ii) বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি।

সমস্যা: উপযোগী উন্নত প্রযুক্তি সর্বত্র পাওয়া যায় না। ? বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি।

অন্যান্য অপ্রচলিত শক্তি (Other Non-conventional Energy Resources)

অন্যান্য অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

সামুদ্রিক তাপীয় শক্তির রূপান্তরণ [(Ocean Thermal Energy Conversion (OTEC)]: সমুদ্রের অভ্যন্তরভাগ ও পৃষ্ঠদেশের জলের উন্নতার পার্থক্যের সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে সামুদ্রিক তাপীয় শক্তির রূপান্তর বলে। এক্ষেত্রে শক্তি উৎপাদন ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ যথেষ্ট কম হওয়ায় এই শক্তি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশেষ জনপ্রিয় নয়। কিউবার মাতানজাস-এ সর্বপ্রথম এই শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। 
জীবভর শক্তি (Biomass Energy): জীবদেহে সঞ্চিত জৈব পদার্থ থেকে যে শক্তি উৎপাদন করা হয়, তাকে জীবভর শক্তি বলে। ফিনল্যান্ডের আলহোমেন্স-এ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জীবভর শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, জাপান, ভারত প্রভৃতি বিভিন্ন দেশ জীবভর শক্তি উৎপাদন করে। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত শক্তিগুলি হল-ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ, কৃষি বর্জ্যজাত শক্তি, সমুদ্রস্রোত শক্তি, সমুদ্রজলের লবণতা শক্তি প্রভৃতি।

Post a Comment

0 Comments