বাংলাদেশ কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?
শক্তিশালী মুঘল সম্রাটদের শেষ প্রতিনিধি ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য অবক্ষয়ের পথে চলে যায়। দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আমলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন সুবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। বাংলাদেশ ছিল তার মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশে নবাবি শাসন প্রতিষ্ঠা :
* বাংলা সুবার উত্থান:
বাবরের সময়ে বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন নুসরত শাহ। তিমি মুঘলবিরোধী জোটে যোগ দেন। ঘর্ঘরার যুদ্ধে (১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে) তিনি পরাজিত হলেও বাংলা স্বাধীন থাকে। পরে সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গিরের আমলে কররানি বংশের ও বারো-ভুঁইয়াদের পতন ঘটলে বাংলাদেশ মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হয়।
* মুর্শিদকুলি খান- দেওয়ান:
সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে থাকার সময় মুর্শিদকুলি খান বেরারের দেওয়ান ছিলেন। তিনি তার দক্ষতার জন্য সম্রাটের সুনজরে পড়েন। সম্রাট তাকে বাংলার দেওয়ান পদে নিয়োগ করেন (১৭০০ খ্রিস্টাব্দে)। তিনি বাংলার রাজস্ব সংস্কারের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে সম্রাটের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি সম্রাটকে নিয়মিত বার্ষিক পেশকাশ দান করতেন। এজন্য সম্রাট তাকে দেওয়ানি আদায়ের কাজে স্বাধীনতা দেন।
* মুর্শিদকুলি খান- সুবাদার:
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুয়াজ্জম প্রথম বাহাদুর শাহ উপাধি নিয়ে সম্রাট হন। তিনি মুর্শিদকুলি খানকে দাক্ষিণাত্যে বদলি করেন। দুবছর পরে আবার তাকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। সম্রাট ফাররুখশিয়র তাকে সুবাদার (নাজিম বা নবাব) পদ দেন (১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে)।
মুর্শিদকুলি খান- নবাব : এর ফলে মুর্শিদকুলি খান একাধারে
দেওয়ান এবং নাজিম বা নবাব হন। মুঘল শাসনব্যবস্থায় সুবার সর্বোচ্চ দুটি পদ এক ব্যক্তির হাতে থাকার ফলে তিনি কার্যত স্বাধীন শাসক হয়ে ওঠেন, যদিও তিনি সম্রাটের প্রতি আনুগত্য দেখাতেন এবং বার্ষিক পেশকাশ দিতেন।
এইভাবে মুঘল রাজশক্তির সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হয়েও বাংলাদেশ একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
read more