728×90 ads

যুক্তির বিভাগ

যুক্তির বিভাগ (Classification of Arguments)


তর্কবিদ্যায় যুক্তিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে- অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument) এবং আরোহ যুক্তি (Inductive Argument) |


অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument)


যে যুক্তিতে এক বা একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, অর্থাৎ যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলে সিদ্ধান্তটি কখনোই মিথ্যা হতে পারে না এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্য অপেক্ষা ব্যাপকতর নয়, সেই যুক্তিকেই বলা হয় অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument)। অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তগুলির বক্তব্য কখনোই যুক্তিবাক্যের বক্তব্যকে অতিক্রম করে যেতে পারে না। 


অবরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য


অবরোহ যুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (1) অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তিবাক্যের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে। (2) যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। (3) সিদ্ধান্তে এমন কোনো বিষয় প্রমাণিত হতে পারে না, যা যুক্তিবাক্যের মধ্যে নিহিত নয়। (4) যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতার চেয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপকতা কখনোই বেশি হবে না। অর্থাৎ, তা যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতার হয় সমান হবে, নয়তো তার চেয়ে কম হবে। (5) অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আকারগত সত্যতার ওপরেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, বস্তুগত সত্যতার ওপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। অর্থাৎ, বাস্তব ঘটনার সঙ্গে অবরোহ যুক্তির মিল থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। যুক্তির আকার কিন্তু এতে লঙ্ঘিত হয় না। (6) অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তের সত্যতা তার যুক্তিবাক্যের সত্যতা থেকে নিঃসৃত হয়। সেকারণেই দাবি করা যায় যে, যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলে সিদ্ধান্তটি কখনোই মিথ্যা হতে পারে না। (7) অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্যের বক্তব্যবিষয়কে অতিক্রম করতে পারে না। যুক্তিবাক্যের অপ্রমাণিত বিষয়কেই তা সিদ্ধান্তে প্রমাণ করে মাত্র। (8) সিদ্ধান্তের সত্যতাকে প্রমাণ করাই হল, অবরোহ যুক্তির মূল উদ্দেশ্য এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তির অপরাপর বিচার সম্ভব হয়। 


আরোহ যুক্তি (Inductive Argument)


যে যুক্তিতে একাধিক যুক্তিবাক্যের ওপর নির্ভর করে প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নিয়মের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য-সংশ্লেষক। (Universal Synthetic) বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকেই বলে আরোহ যুক্তি (Inductive Argument)। আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সবসময়ই যুক্তিবাক্যের চেয়ে ব্যাপকতর হয় এবং কখনোই তা যুক্তিবাক্যগুলি থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত নয়। 


আরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য


আরোহ যুক্তির সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে তার কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল: (1) অবরোহ যুক্তির মতো আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটিও সর্বদা যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্যই হল আরোহের সিদ্ধান্তের মূলভিত্তি। (2) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সবসময়ই একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ, আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি কখনোই একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। (3) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয় ঠিকই, কিন্তু তা কখনোই অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলেও, সিদ্ধান্তটি মিথ্যা হতে পারে। (4) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সর্বদা যুক্তিবাক্যের চেয়ে ব্যাপকতর হয়। অর্থাৎ, ব্যাপকতা বা বিস্তৃতির দিক থেকে তা সবসময়ই যুক্তিবাক্য অপেক্ষা বেশি। (5) আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে আকারগত সত্যতার সঙ্গে সঙ্গে বস্তুগত সত্যতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ, বস্তুগত সত্যতার দিকটিও এক্ষেত্রে উপেক্ষিত নয়। (6) আরোহ যুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল, বস্তুগত সত্য আবিষ্কারে সহায়তা করা।  


অবরোহ যুক্তি ও আরোহ যুক্তির সাদৃশ্য


অবরোহ এবং আরোহ যুক্তির মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মধ্যে কিছু সাদৃশ্যও রয়েছে। অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তিবাক্যগুলিকে জ্ঞাত সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং তা থেকেই সিদ্ধান্তে বা অজ্ঞাত সত্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করা হয়। একইভাবে, আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রেও যুক্তিবাক্যগুলিকে জ্ঞাত সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সিদ্ধান্তে বা অজ্ঞাত সত্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করা হয়।

Post a Comment

0 Comments