728×90 ads

ন্যায় মতে প্রমাণ কী? প্রমাণ হিসেবে প্রত্যক্ষের লক্ষণ আলোচনা করো।

ন্যায় মতে প্রমাণ


ন্যায়দর্শনে যথার্থ অনুভবকেই বলা হয় প্রমা। এই প্রমার উৎসকেই বলা হয় প্রমাণ। অর্থাৎ, যে প্রণালীতে বা যেভাবে প্রমা উৎপন্ন হয়, তাকেই বলে প্রমাণ। ন্যায়দর্শনে তাই বলা হয়েছে প্রমার করণই হল প্রমাণ। ন্যায়দর্শনে এই প্রমাণ হল চারপ্রকার-প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দ।

প্রমাণ হিসেবে প্রত্যক্ষের লক্ষণ


ন্যায়দর্শনে যে চারপ্রকার প্রমাণকে স্বীকার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ হল আদি ও মূল প্রমাণ। কারণ, এই প্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভর করেই অন্যান্য প্রমাণ নিঃসৃত হয়েছে। সে-কারণেই প্রত্যক্ষ প্রমাণকে জ্যেষ্ঠ প্রমাণৰূপে উল্লেখ করা হয়। প্রত্যক্ষ প্রমাণের বিষয়টিকে তাই নৈয়ায়িকরা সবার প্রথমে উপস্থাপিত করেছেন।

ন্যায় মতে, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অর্থ বা বিষয়ের সন্নিকর্ষ হেতু যে সন্দেহাতীত ও যথার্থ জ্ঞান উৎপন্ন হয় তাকেই বলা হয় প্রত্যক্ষ। মহর্ষি গৌতমের ন্যায়সূত্রে বলা হয়েছে-

"ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষোৎপন্নং জ্ঞানম্ অব্যপদেশ্যম্ অব্যভিচারী ব্যবসায়াত্মকম্ প্রত্যক্ষম্।"

অর্থাৎ, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অর্থের বা বিষয়ের সন্নিকর্ষের ফলে যে জ্ঞান উৎপন্ন হয় (ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষোৎপন্নং), যা অপর কোনো কিছুর মাধ্যমে প্রাপ্ত নয় (অব্যপদেশ্যম্), যা নিশ্চিত (অব্যভিচারী) এবং যা সংশয়শূন্য (ব্যবসায়াত্মকম্) রূপে গণ্য-তা-ই হল প্রত্যক্ষ (প্রত্যক্ষম্)।

মহর্ষি গৌতম প্রদত্ত প্রত্যক্ষের সংজ্ঞা-বিশ্লেষণ


মহর্ষি গৌতম প্রদত্ত প্রত্যক্ষের এই সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা যে লক্ষণগুলিকে পাই, সেগুলি হল:

ইন্দ্রিয়: প্রত্যক্ষের একটি লক্ষণ বা শর্ত হল ইন্দ্রিয়। ন্যায় মতে, আমাদের মোট ইন্দ্রিয় হল ছয়টি। এদের মধ্যে পাঁচটি হল বাহ্য ইন্দ্রিয় এবং একটি হল আন্তর ইন্দ্রিয়। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা এবং ত্বক-এই পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয় দিয়ে আমরা বাহ্য বিষয়কে প্রত্যক্ষ করি। আর মন নামক অন্তরিন্দ্রিয় দিয়ে আমরা মানসিক অবস্থা বা বিষয়সমূহকে যেমন-সুখ, দুঃখ ইত্যাদিকে প্রত্যক্ষ করি।

অর্থ বা বিষয়: অর্থ বলতে এখানে জ্ঞানের বিষয়কে বোঝানো হয়েছে। ইন্দ্রিয় এবং অর্থের সঙ্গে সন্নিকর্ষ বা সংযোগ হলে তবেই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উদ্ভব হয়। অর্থাৎ, যে বিষয় বা অর্থ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, সেই বিষয় কখনোই প্রত্যক্ষের বিষয়রূপে গণ্য হতে পারে না। ইন্দ্রিয় ও বিষয়ের সংযোগ তাই প্রত্যেকের অন্যতম একটি শর্ত।

সন্নিকর্ষ: সন্নিকর্ষ শব্দটির অর্থ হল সংযোগ। সংযোগ হল ইন্দ্রিয় ও অর্থের মধ্যে সংযোগ। ইন্দ্রিয় আছে, আবার বিষয়ও আছে, অথচ তাদের মধ্যে কোনো সংযোগ বা সন্নিকর্ষ নেই, তাহলে সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রমা উৎপন্ন হতে পারে না। ইন্দ্রিয় ও বিষয়ের সংযোগ তাই প্রত্যক্ষের অন্যতম একটি শর্ত।

অব্যপদেশ্য: অব্যপদেশ্য শব্দটির অর্থ হল অশাব্দ। অর্থাৎ, যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অব্যপদেশ্য শব্দটির দ্বারা নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষকেই বোঝানো হয়।

অব্যভিচারী: অব্যভিচারী শব্দটি ব্যভিচারের বিপরীত। ব্যভিচারের অর্থ হল চরিত্রহীনতা। অর্থাৎ, যে জ্ঞান বিষয়ের অনুরূপ নয়, তা-ই হল ব্যভিচার জ্ঞান। সুতরাং, যে জ্ঞান বিষয়ের অনুরূপ, তা-ই হল অব্যভিচারী। এই অব্যভিচারী লক্ষণের জন্যই যথার্থ প্রত্যক্ষকে ভ্রম প্রত্যক্ষ থেকে পৃথক করা যায়।

ব্যবসায়াত্মক: ব্যবসায়াত্মক শব্দটির অর্থ হল সংশয় বা বিপর্যয়শূন্য। যে প্রত্যক্ষে সংশয় বা বিপর্যয় থাকে, সেই প্রত্যক্ষ যথার্থ নয়। যেমন-এটা মানুষ না গাছের কাণ্ড-এরূপ সংশয়ে যথার্থ প্রত্যক্ষ সম্ভব নয়। সুতরাং, প্রত্যক্ষ হল সংশয়মুক্ত, বিপর্যয়মুক্ত যথার্থ জ্ঞান।

Post a Comment

0 Comments