সমব্যাপ্তি ও বিষমব্যাপ্তি
ন্যায় মতে, ব্যাপ্তি হল ব্যাপ্য ও ব্যাপকের মধ্যে, অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত সহচর সম্বন্ধ। ব্যাপ্য ও ব্যাপকের ব্যাপকতা বা বিস্তৃতির তারতম্য থাকতে পারে। এই ব্যাপকতা বা বিস্তৃতির তারতম্য অনুসারে ব্যাপ্তি সম্পর্ককে সমব্যাপ্তি এবং বিষমব্যাপ্তি-এই দু-ভাবে বিভক্ত করা হয়েছে।
সমব্যাপ্তি: সমব্যাপ্তির ক্ষেত্রে স্বীকার করা হয় যে, ব্যাপ্য ও ব্যাপকের
ব্যাপকতা সমান হয়। অর্থাৎ, ব্যাপ্যের ব্যাপকতা যতটা, ততটাই ব্যাপকতা হয় ব্যাপকের। A এবং B বিষয় দুটি সমব্যাপকরূপে গণ্য হবে, যদি এমন হয় যে, যেখানে যেখানে A সেখানে সেখানেই B এবং যেখানে যেখানে B সেখানে সেখানেই A থাকে। A এবং B যদি সমব্যাপকতাসম্পন্ন হয়, তাহলে তাদের মধ্যস্থিত ব্যপ্তি সম্পর্ককে বলা হয় সমব্যাপ্তি। সমব্যাপ্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল-সকল উৎপত্তিশীল বস্তুই হয় বিনাশশীল। কারণ উৎপত্তিশীল বস্তু এবং বিনাশশীল বস্তু-র ব্যাপ্তি হল সমান। তাই বলা যায় যে, যারই উৎপত্তি আছে, তারই বিনাশ আছে। আবার, যারই বিনাশ আছে তারই উৎপত্তি আছে। এক্ষেত্রে তাই যে-কোনো একটি থেকে অপরটিকে অনুমান করা যায়।
বিষমব্যাপ্তি: বিষমব্যাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের ব্যাপকতা সমান
নয়। অর্থাৎ, ব্যাপ্যের ব্যাপকতা যতটা, ব্যাপকের ব্যাপকতা ততটা নয়। ব্যাপ্যের চেয়ে ব্যাপকের ব্যাপকতা বেশিও হতে পারে, আবার কমও হতে পারে। অর্থাৎ, সমব্যাপক নয় এমন দুটি বিষয়ের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্পর্ককে বলা হয় বিষমব্যাপ্তি। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ হল বিষমব্যাপ্তি। কারণ আগুনের ব্যাপ্তি আর ধোঁয়ার ব্যাপ্তি এক নয়। আগুন ধোঁয়া অপেক্ষা বেশি স্থানে থাকে এবং ধোঁয়া আগুন অপেক্ষা অবশ্যই কম স্থানে থাকে। যেমন-বৈদ্যুতিক উনুন, তপ্ত লৌহপিণ্ড ইত্যাদিতে আগুন থাকলেও, ধোঁয়া থাকে না। তাই ধোঁয়া দেখে আগুনের অনুমান করা গেলেও, আগুন দেখে ধোঁয়ার অনুমান সবসময় করা যায় না।